ওপেনিংয়ে ‘আলিবাবা ৪০ চোর'
প্রকাশিত:
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৫২
আপডেট:
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:০৬

আরব্য রজনীর লোককাহিনিতে আলিবাবার কাছ থেকে মন্ত্র শিখে তাঁর ভাই কাশেম গিয়েছিল দস্যুদের গুহায় মোহর আনতে। ‘চিচিং ফাক’ বলে ঢুকতে তিনি ঠিকই পেরেছিলেন; কিন্তু বেরোনোর সময় ভুলে গিয়েছিলেন মন্ত্রটি। আবুধাবি থেকে হঠাৎ গল্পটি মনে এলো বাংলাদেশ দলের ওপেনিং জুটি দেখে।
‘আলিবাবা ৪০ চোরের' এই গল্পের মতোই বাংলাদেশ দলের ওপেনার তানজিদ তামিম দ্বিপক্ষীয় সিরিজে রীতিমতো ‘বুদ্ধিমান আলিবাবা' কিন্তু আইসিসি বা এসিসির টুর্নামেন্ট মঞ্চে এলেই ‘কাশেম’! নয় নয় করেও তিন-তিনটি আইসিসি টুর্নামেন্ট আর দু-দুটি এশিয়া কাপ খেলে ফেলেছেন তিনি, যার সব কটিতেই সুপার ফ্লপ। একটু ভালো দল এবং পিচে খানিকটা সুইংয়েই ভেঙে পড়ছেন তিনি। সঙ্গীটাও তাঁর তেমনই, স্ট্রাইক রোটেড করে খেলার ধাতই যেন নেই তাঁর। সেদিন ম্যাচের পর কিটস গুছিয়ে স্টেডিয়াম থেকে বেরোনোর পথে দলের সঙ্গে থাকা এক স্টাফের দীর্ঘশ্বাস, ‘এদের দিয়ে আসলে হবে না, এরা কেউই বড় মঞ্চের খেলোয়াড় নয়। ওপেনিংয়ে একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় দরকার।'
তাহলে এই যে দুই বছর ধরে তানজিদ তাপীঈএজে থাকা সেসব বাংলাদেশি- ভারতীয়দের মতো, যারা কিনা দেখতে আরব আরব, আসলে তা নয়! এই তানজিদ আর পারভেজকে নিয়েই আগামী বছরের বিশ্বকাপ ভাবনা গড়ছে দল। অথচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তারা কিনা প্রথম দুই ওভার মেডেন দিয়েছেন। এশিয়া কাপ বা আইসিসির মঞ্চে বোধহয় কোনো ওপেনারের এমন রেকর্ড নেই। ম্যাচের পর ক্যামেরার সামনে এসে জাকের আলী যতটা পারা যায় ওপেনারদের ওপর হতাশা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে পুরোটা বোধহয় পারেনননি। ‘এই উইকেট এতটা কঠিন ছিল না যে খেলা যাচ্ছিল না।” অধিনায়ক লিটনও পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, “পাওয়ার প্লেতেই আমরা হেরে গেছি।'
কিন্তু বড় আসরে তানজিদের যে অতীত, তাতে কিন্তু এদিনের পারফরম্যান্সে অবাক হওয়ার কিছু নেই। পাঁচটি টুর্নামেন্টে তানজিদের খেলা ২২ ম্যাচে রানের গড় ১৩.৫। যেখানে সর্বোচ্চ ৫১ রান। পরিসংখ্যান বলে এ পর্যন্ত আইসিসি বা এসিসির আসরে বাংলাদেশের কোনো ওপেনারের এতগুলো ম্যাচ খেলার পর এত কম রান নেই।
গত বছর টি২০ ম্যাচে অভিষেকের পর সাত ম্যাচে ১২৭ স্ট্রাইকরেট আর ৪৭ গড়ে তাঁর রান ছিল ২৩৭। যার সবগুলোই ছিল দ্বিপক্ষীয় সিরিজে। অথচ সেই তিনিই টি২০ বিশ্বকাপে গিয়ে সাত ম্যাচে ৭৬ করলেন। স্ট্রাইকরেট একশ দশের কাছাকাছি! তারপর আবার যখন দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলো হলো— শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস। আবার সেই রানের ‘চিচিং ফাক’। ২৭ গড়ে ১৩০ স্ট্রাইকরেটে দুর্বার তিনি। আবার যখন এশিয়া কাপ শুরু, ফের তিনি ঢুকলেন চল্লিশ চোরের গুহায়। এবারও ভুলে গেলেন রানে ফেরার মন্ত্র। দুই ওপেনারের শট খেলার বৈচিত্র্য যে সীমিত, তা জেনেই মাঠে এসেছিলেন লঙ্কান বোলাররা।
তবে এই ভুল শুধু তানজিদের একার নয়, নির্বাচক প্রধান গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকেও নিতে হবে। তাঁকে জহুরি হতে হবে, সিরিজ আর টুর্নামেন্টের খেলোয়াড়কে আলাদাভাবে চিনে নিতে হবে। যা কিনা শ্রীলঙ্কার কোচ নিপুণভাবে করেছেন। কামিল মিশারা কিন্তু ঘরের মাঠে সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেননি, বছর তিনেক আগে অভিষেক হওয়া সেই অস্ত্রকেই বাংলাদেশ ম্যাচের জন্য বেছে নিয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে হাসারাঙ্গাকে সিরিজে না খেলিয়ে খেলিয়েছেন এশিয়া কাপের এই গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে ৷ বিশ্বক্রিকেটের তারকা ক্রিকেটার ছিলেন বলেই হয়তো তিনি কাচ আর হীরার পার্থক্যটা বুঝতে পারেন। এমন একজন কোচ ভীষণ দরকার বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: