সোমবার, ২৫শে আগস্ট ২০২৫, ১০ই ভাদ্র ১৪৩২


জাতীয় নির্বাচন ও জুলাই সনদ নিয়ে যা বলছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি


প্রকাশিত:
২৫ আগস্ট ২০২৫ ১৩:৪৯

আপডেট:
২৫ আগস্ট ২০২৫ ১৫:১৮

ছবি সংগৃহীত

পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটাতে এবং প্রস্তাবিত জুলাই সনদ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।

আজ (সোমবার) সেগুনবাগিচায় দলের নিজস্ব মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক তাদের প্রস্তাব ও মতামত তুলে ধরেন।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রস্তাব
১. অবাধ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সরকারকে দ্রুত যাবতীয় পক্ষপাতদুষ্টতা থেকে সরে আসতে হবে এবং বিতর্কিত উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করতে হবে। প্রয়োজনে দক্ষ ও নিরপেক্ষ উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে হবে।

২. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈশিষ্ট অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

৩. সরকারের ভেতরে থাকা দলীয় সরকারগুলো ভেঙে দিয়ে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

৪. প্রশাসনকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে, নইলে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

৫. নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হচ্ছে ভেঙে পড়া নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জনআস্থা ফিরিয়ে আনা। স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সাথে নির্বাচনী প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে হবে।

৬. আরপিও বা নির্বাচন বিধি চূড়ান্ত করার আগে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের মতামত নিতে হবে। অঢেল অর্থব্যয়, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো কমিশনের অধীনে আনাও জরুরি।

৭. রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকে উগ্র বৈরিতা ও সহিংসতায় নিয়ে যাওয়া আত্মঘাতী হবে। এতে গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

৮. ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়লে দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এমন পরিস্থিতিতে ‘আম ছালা দুটোই চলে যাবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জুলাই সনদ নিয়ে অবস্থান
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি প্রস্তাবিত জুলাই সনদ নিয়ে বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট অবস্থান প্রকাশ করেছে।

১. জুলাই সনদে দলগুলোর স্বাক্ষরই যথেষ্ট, অতিরিক্ত অঙ্গীকারনামার প্রয়োজন নেই। তবে অধিকাংশ দল চাইলে ৮ দফার প্রথম প্রস্তাব বিবেচনায় আসতে পারে।

২. অঙ্গীকারনামার দ্বিতীয় দফাটি, বিশেষ করে— "... বিদ্যমান সংবিধান বা থাকলে সেই ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশ প্রাধান্য পাবে"— কারণ কোনো সমঝোতা সনদ রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান গঠনতান্ত্রিক দলিল হতে পারে না। এই ধরনের চিন্তা ও তৎপরতা সংবিধানের ওপর আরেকটি সুপ্রা কনস্টিটিউশনাল দলিল স্থাপনের সামিল। এই প্রস্তাব সংবিধানের দার্শনিক ভিত্তিকে আঘাত করবে, রাজনৈতিক গুরুত্ব, মৌল ভিত্তি ও মর্যাদার অবনমন ঘটাবে। বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোতে জনগণের অভিপ্রায় নিশ্চিত হওয়া যাবে কেবল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। কিছু রাজনৈতিক দলের সমঝোতার দলিলকে জনগণের চূড়ান্ত অভিপ্রায় হিসাবে বিবেচনা করার কোনো অবকাশ নেই।

৩. অঙ্গীকারনামার তৃতীয় প্রস্তাবও বিবেচনাপ্রসূত ও গ্রহণযোগ্য নয়। সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশ সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের উপর ন্যস্ত করার দরকার নেই। এটা অপ্রয়োজনীয়। কারণ, যে বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর যে সমঝোতার ভিত্তিতে সনদ স্বাক্ষরিত হবে, সে ব্যাপারে উত্থাপিত প্রশ্নসমূহের ক্ষেত্রে নির্বাচিত সংসদের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

৪. অঙ্গীকারনামার চতুর্থ প্রস্তাবও গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিযুক্ত নয়। জুলাই সনদ নিয়ে ক্ষুব্ধ যে কোনো নাগরিকের আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকা উচিত। এটা তার গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক অধিকার। সনদে স্বাক্ষর করা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বা সনদের বিশেষ কোনো বিধান বা প্রস্তাবের প্রতি কোনো নাগরিকের সমর্থন নাও থাকতে পারে— এটা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। সংবিধানকে গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক করতে গিয়ে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

৫. অঙ্গীকারনামার ষষ্ঠ ও সপ্তম প্রস্তাব এখানে অপ্রয়োজনীয়। আর জুলাই ঘোষণাপত্রে অনেক বিষয়ই উল্লেখ করা হয়েছে।

জুলাই সনদের আইনি সুরক্ষা
গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবকে অবাস্তব আখ্যা দিয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটি বলছে—

১. জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটে যাওয়ার সুযোগ নেই। এত ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রেখে গণভোটে যাওয়ার প্রশ্নটাই অবান্তর।

২. সংবিধান সভার নির্বাচনের প্রশ্নটাও অবান্তর। কারণ আমরা সংবিধানশুন্য অবস্থায় নেই। বিদ্যমান সংবিধানের অধীনেই অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে এবং দেশ পরিচালনা করে আসছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও জুলাই সনদ প্রণয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছে বিদ্যমান সংবিধানের ভিত্তিতে।

৩. জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নতুন কোনো সংবিধান প্রনয়ণে কাজ করছে না। আমরা সবাই মিলে কাজ করছি বিদ্যমান সংবিধানকে প্রকৃতপক্ষে গণতান্ত্রিক, দায়বদ্ধ, ভারসাম্যমূলক ও জবাবদিহিমূলক করার লক্ষ্য নিয়ে।

৪. জুলাই সনদের আইনি সুরক্ষা প্রদানের বিষয়ে আমাদের অবস্থান ইতিবাচক। আলোচনা করে এ সম্পর্কে মতামত গঠন করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে সনদ স্বাক্ষরের পর সরকার প্রধান সংবিধানের ১০৬ আর্টিকেল অনুযায়ী উপযুক্ত মাধ্যমে আপিল বিভাগের মতামত চাইতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোতে জনগণের অভিপ্রায় নিশ্চিত করা সম্ভব কেবল নির্বাচনের মাধ্যমে। কিছু রাজনৈতিক দলের সমঝোতাকে জনগণের চূড়ান্ত মত হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ নেই।

ডিএম/রিয়া



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top