বৃহঃস্পতিবার, ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭শে ভাদ্র ১৪৩২


প্রকৃত বন্ধু আসলে কে?


প্রকাশিত:
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:২২

আপডেট:
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:২৫

ছবি : সংগৃহীত

বাংলায় একটি কথা প্রচলিত আছে, ‘সঙ্গী মন্দ, সর্বনাশ অনন্ত’। অর্থাৎ, খারাপ বন্ধুর সঙ্গে চললে জীবনে সর্বনাশ নেমে আসে। মানুষের চরিত্র, চিন্তাধারা ও জীবনের গতিপথ অনেকাংশেই তার সঙ্গী দ্বারা নির্ধারিত হয়। যেমন ভালো সঙ্গ আমাদের উন্নতির পথে নিয়ে যায়, তেমনি মন্দ সঙ্গ আমাদের অধঃপতনের দিকে ঠেলে দেয়।

মনোবিজ্ঞানে বলা হয়, বন্ধু হলো সামাজিক সমর্থনের অন্যতম প্রধান উৎস। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব যদি হয় সুযোগসন্ধানী বা স্বার্থপর, তবে তা মানসিক আঘাত ও একাকীত্ব সৃষ্টি করে। বাংলার লোকজ সংস্কৃতি থেকে শুরু করে ধর্মীয় শিক্ষায়ও খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

কারণ প্রকৃত বন্ধু দুঃসময়ে সমর্থন দেয়, আর মন্দ বন্ধু শুধু সুবিধার সময় পাশে আসে। তাই খারাপ বন্ধু চেনা এবং সঠিক বন্ধুত্ব নির্বাচন করা জীবনের মান উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সুখের সময়ে চারপাশে অনেক মানুষকে কাছে পাওয়া যায়, কিন্তু দুঃসময়ে যারা পাশে থাকে তারাই প্রকৃত বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

বিপদের সময়ে বন্ধুত্বের গুরুত্ব:

মানুষ যখন কষ্টে থাকে, যেমন অর্থনৈতিক সংকট, শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ বা পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত, তখন বন্ধুর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়। সত্যিকারের বন্ধুরা তখন শুধু সান্ত্বনাই দেয় না, বাস্তবে সাহায্যও করে, যেমন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে গিয়ে পাশে দাঁড়ানো, মানসিক সমস্যায় পাশে বসে শোনা, আর্থিক কষ্টে সামান্য সহায়তা দেওয়া, পরিবারে সংকট এলে মনোবল জোগানো।

এসব ছোট ছোট সহায়তাই কঠিন সময়কে সহনীয় করে তোলে। আর যে বন্ধুরা শুধু আনন্দের সময় পাশে থাকে কিন্তু কষ্টের সময় অদৃশ্য হয়ে যায়, তাদের প্রকৃত বন্ধুর তালিকায় রাখা যায় না। আমাদের সমাজে নানা সংকটের সময় বন্ধুত্বের আসল পরীক্ষা হয়।

অর্থনৈতিক সংকট: ঢাকা শহরে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী চাকরি হারানোর পর ভাড়া ও খাবারের টাকাও জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিল। সে সময় যাদের সাথে আড্ডা দিত তারা দূরে সরে যায়, কিন্তু শৈশবের এক বন্ধু নিজের সামান্য আয় থেকেও তাকে কয়েক মাস সহায়তা করে। এখানেই প্রকৃত বন্ধুত্ব প্রকাশ পায়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ: গ্রামীণ এলাকায় বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রতিবেশী কিংবা বন্ধুরাই প্রথমে সাহায্যের হাত বাড়ায়। কেউ খাবার দেয়, কেউ আশ্রয় দেয়। বিপদ সামলাতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে এই বন্ধুরাই।

স্বাস্থ্য সংকট: একজন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হলে অনেক আত্মীয়ও আসতে চায় না, কিন্তু প্রকৃত বন্ধু রাত জেগে সেবা করে। এই আচরণই বন্ধুত্বের আসল প্রমাণ।

সুযোগসন্ধানী বন্ধুদের বৈশিষ্ট্য:

আমাদের জীবনে এমন অনেক মানুষ থাকে যারা কেবল নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাছে আসে। এরা মূলত সুযোগসন্ধানী। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এদের বলা যায় instrumental friends, অর্থাৎ যাদের সম্পর্ক কেবল নির্দিষ্ট সুবিধার জন্য। যেমন—

১. চাকরিতে পদোন্নতি হলে অভিনন্দন জানায়, কিন্তু চাকরি হারালে পাশে দাঁড়ায় না। সুখবর শুনে হাততালি দেয়, কিন্তু কষ্টের সময় সরে যায়।

২. টাকার প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করে, কিন্তু বিপদের সময় সাহায্য করতে চায় না। সম্পর্ককে শুধু স্বার্থের জন্য ব্যবহার করে।

৩. নিজের সমস্যার কথা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বলে, কিন্তু অন্যের কষ্ট শোনে না। একতরফা সম্পর্ক তৈরি করে যেখানে সহানুভূতির অভাব থাকে।

৪. অসুস্থ হলে খোঁজ নেয় না, কিন্তু কোনো অনুষ্ঠান বা আনন্দক্ষণে সবসময় উপস্থিত থাকে। দুঃসময়ের প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ থাকে না।

৫. গোপন কথা শোনে কিন্তু পরে অন্যের সামনে ফাঁস করে দেয়। বিশ্বাস ভঙ্গ করে, যা প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিপন্থি।

৬. সুবিধা থাকলে কাছে আসে, কিন্তু দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। কেবল নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে বন্ধুত্বকে ব্যবহার করে।

৭. সরাসরি সাহায্য না করে আড়ালে সমালোচনা করে। দুঃসময়ে সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে কষ্ট বাড়ায়। আবার পরিস্থিতি ভালো হলে হাসিমুখে ফিরে আসে।

৮. বিপদের সময় দেখা হলেও সালাম দেয় না। আমাদের সংস্কৃতিতে ভাই, বন্ধু বা পরিচিত কেউ যখন দেখা করে তখন শুভেচ্ছা বিনিময় বা শ্রদ্ধা জানানো সামাজিক দায়িত্ব বলে মনে করা হয়। সংকটের সময় এটি এড়িয়ে চলা মূলত পাশে না থাকার লক্ষণ এবং সম্পর্কের প্রতি অসততা নির্দেশ করে।

মনোবিজ্ঞানে বন্ধুত্ব ও মানসিক সহায়তা:

মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বন্ধুত্ব একটি সামাজিক সমর্থন ব্যবস্থা (social support system)। গবেষণা বলছে, সামাজিক সমর্থন মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মানসিক চাপের সময়ে বন্ধুর সমর্থন পায় তারা কম হতাশায় ভোগে, আত্মবিশ্বাস বাড়ে, সমস্যা মোকাবিলা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, আত্মহত্যার প্রবণতা কম থাকে, শারীরিকভাবে দ্রুত সুস্থ হয়, জীবনের প্রতি আশাবাদী হয়।

উদাহরণস্বরূপ, করোনাভাইরাস মহামারির সময় যারা বন্ধু বা কাছের মানুষদের সাথে ফোন বা অনলাইনে যোগাযোগ বজায় রেখেছিল, তারা মানসিকভাবে অনেকটা স্থিতিশীল ছিল। আর একাকীত্বে ভোগা মানুষদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার হার বেশি ছিল। শুধু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, বৈজ্ঞানিক প্রমাণও এই সত্যকে সমর্থন করে।

পর্যালোচনামূলক গবেষণায় পাওয়া গেছে যেসব প্রাপ্তবয়স্কদের উচ্চমানের বন্ধুত্বে যেখানে সামাজিক সমর্থন ও সঙ্গদান থাকে, সেটা তাদের মানসিক সুস্থতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে এবং বিষণ্নতা ও উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। এ সুবিধা পুরো জীবনকালজুড়ে টিকে থাকে।

আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, বন্ধুত্ব কেবল মানসিক স্বাস্থ্য নয়, শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথেও সরাসরি সম্পর্কিত। মনোবিজ্ঞানী Julianne Holt-Lunstad-এর বিখ্যাত মেটা-বিশ্লেষণে ৩,০৮,০০০ মানুষের তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, যাদের বন্ধু নেই বা বন্ধুত্বের মান খারাপ, তাদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ। এই ঝুঁকি প্রতিদিন ২০টি সিগারেট খাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাবের চেয়েও বেশি। অর্থাৎ, প্রকৃত বন্ধু মানুষের জন্য এক ধরনের ‘জীবনরক্ষাকারী ওষুধ’।

বন্ধুত্বের মূল্য ও সত্যিকার বন্ধুত্বের গুরুত্ব শুধু একক কোনো সমাজ বা সংস্কৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বের প্রায় সব ধর্ম ও সংস্কৃতিতেই সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জাপানি সংস্কৃতিতে ‘কিজুনা’ শব্দটি বন্ধন, বিশ্বাস ও বন্ধুত্বের প্রতীক। তাদের প্রবাদে বলা হয়-(Shin no tomo wa, konnan no toki ni arawareru) অর্থাৎ ‘প্রকৃত বন্ধু কেবল বিপদের সময় প্রকাশ পায়’। এ সম্পর্কে সমাজ মনোবিজ্ঞানী শেলডন কোহেন (Sheldon Cohen) এবং তার সহকর্মীরা বলেন, সামাজিক সমর্থন ‘বাফার’ হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ, জীবনের চাপ বা মানসিক যন্ত্রণা সরাসরি ক্ষতি করতে পারে না যদি পাশে সমর্থনকারী কেউ থাকে।

কীভাবে চেনা যায় প্রকৃত বন্ধু

মানুষ কিভাবে বুঝতে পারে কে প্রকৃত বন্ধু আর কে নয়? কিছু উপায় হলো—

১. সময় পরীক্ষা: সময়ই বন্ধুত্বের আসল পরীক্ষা। বারবার খারাপ সময়ে কারা পাশে থাকে তা পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই বোঝা যায়।

২. স্বার্থহীনতা: প্রকৃত বন্ধু কোনো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা না করে সাহায্য করে।

৩. আবেগীয় সহায়তা: শুধু কাজেই নয়, কথায়, আচরণে, মানসিক শক্তি যোগানোর মাধ্যমে পাশে থাকে।

৪. নিরাপদ অনুভূতি: সত্যিকারের বন্ধু পাশে থাকলে ভেতরে এক ধরনের নিরাপত্তা ও নিশ্চিন্ততা কাজ করে।

৫. গোপনীয়তা রক্ষা: বিপদের সময় শেয়ার করা ব্যক্তিগত তথ্য তারা কখনো অপব্যবহার করে না।

মনোবৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা:

মনোবিজ্ঞানের আলোকে বলা যায়, মানুষ যদি নিজের সচেতনতা বাড়াতে পারে, সঠিক সীমারেখা টেনে নিতে পারে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী দূরত্ব বজায় রাখতে শেখে, তবে সে সহজেই ক্ষতিকর সঙ্গ ত্যাগ করতে সক্ষম হয়। এর পাশাপাশি, নিজের মঙ্গলকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন, ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলাও অত্যন্ত প্রয়োজন। নিচে কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো—

১. আত্মসচেতনতা: বন্ধুত্ব নিয়ে ভাবুন; কোনো সম্পর্ক আপনাকে অস্বস্তি, দুশ্চিন্তা বা অবসন্ন করে তুলছে কি না, তা ভেবে দেখুন।

২. নিজের অনুভূতিকে বিশ্বাস করুন: যদি বন্ধুত্বে উদ্বেগ, মানসিক চাপ বা শক্তি-ক্ষয় অনুভূত হয়, তবে সেটি সংকেত যে সম্পর্কটি স্বাস্থ্যকর নয়।

৩. সীমারেখা টানা ও ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি করা: ধীরে ধীরে দূরে সরে আসুন। হঠাৎ সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রয়োজন নেই; ধীরে ধীরে আমন্ত্রণ গ্রহণ না করা বা একসাথে সময় না কাটানোর মাধ্যমে দূরত্ব বাড়ানো যায়।

৪. ‘না’ বলতে শিখুন: ভদ্রভাবে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে বা অন্য কাজে যুক্ত থাকার কারণে সময় দিতে না পারার কথা জানান।

৫. ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার বন্ধ করুন: ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করলে আবেগগত টান বাড়ে, যা থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই গোপনীয় তথ্য ভাগাভাগি এড়িয়ে চলুন।

৬. নিজের মঙ্গলকে অগ্রাধিকার দিন: প্রথমত নিজের বন্ধু হবেন। যে সম্পর্ক মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে, তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন এবং একা থাকাকে আনন্দময় করার চেষ্টা করুন। মনে রাখতে হবে, খারাপ বন্ধুত্ব শেষ করা ব্যক্তিগত বিকাশ ও মানসিক সুস্থতার জন্য একটি যথাযথ সিদ্ধান্ত।

৭. সরাসরি ও দৃঢ় হোন: যদি ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি করা কাজ না করে, তবে খোলাখুলি জানিয়ে দিন যে সম্পর্কটি আর কার্যকর নয়। অতিরিক্ত ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

৮. ইতিবাচক সম্পর্ক খুঁজুন: নতুন ক্লাব বা কার্যক্রমে যোগ দিন যেখানে আপনার মতো মানসিকতা ও আগ্রহের মানুষ আছে।

৯. স্ব-যত্নে মনোযোগ দিন: একটি দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করুন যাতে পছন্দের কাজ থাকে এতে আপনার মধ্যে সংযুক্তি ও উদ্দেশ্যবোধ বাড়বে।

১০. ক্ষমা করো কিন্তু ভুলে না যাওয়া: যারা একবার বিপদের সময় দূরে সরে গেছে, তাদের ক্ষমা করা যেতে পারে, কিন্তু অন্ধভাবে বিশ্বাস করা উচিত নয়।

‘বিপদের বন্ধু-ই প্রকৃত বন্ধু’ এই প্রবাদবাক্য মানুষের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার নির্যাস। মনোবিজ্ঞানের আলোচনায় দেখা যায়, সত্যিকারের বন্ধু মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তারা শুধু সাহায্যই করে না বরং আমাদের আত্মবিশ্বাস ও সমস্যার মোকাবিলার ক্ষমতা বাড়ায়।

অন্যদিকে সুযোগসন্ধানী বন্ধুরা অস্থায়ী, তাদের চিহ্নিত করে সীমারেখা তৈরি করতে হয়। তাই একজন মানুষকে সচেতন হতে হবে কারা কেবল ভালো সময়ে কাছে আসে আর কারা দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ায়। সঠিক বন্ধুত্বকে ধরে রাখতে এবং সুযোগসন্ধানীদের থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলে একজন মানুষ জীবনে মানসিকভাবে অনেক বেশি স্থিতিশীল, সুখী এবং নিরাপদ বোধ করতে পারে।

ড. জেসান আরা : সহযোগী অধ্যাপক ও চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top