হিজরতের রাত: কোরাইশ হত্যাকারীদের চোখের সামনেই কিভাবে রওনা হলেন নবীজি
প্রকাশিত:
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:২৮
আপডেট:
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:২৩

মহানবী মুহাম্মদ (স.) যখন সাহাবিদের মদিনায় হিজরতের নির্দেশ দিলেন, তখন দলে দলে মুসলমানরা নিজেদের সহায়-সম্পদ ত্যাগ করে মদিনার পথে যাত্রা করেন। মদিনার আনসাররা তাঁদের সানন্দে স্বাগত জানান এবং নিজেদের ঘরে আশ্রয় দেন। এভাবে ইসলাম মদিনায় দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
মুশরিকদের নির্যাতনের কারণে অধিকাংশ সাহাবি মক্কা ত্যাগ করলেও নবীজি (স.), আবু বকর (রা.) এবং আলী (রা.) তখনও মক্কায় অবস্থান করছিলেন। সহিহ বুখারির বর্ণনামতে, হিজরতের জন্য প্রস্তুত হলেও নবীজি (স.) হজরত আবু বকরকে অপেক্ষা করার নির্দেশ দেন, কারণ তিনি নিজেও আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় ছিলেন।
দারুন নদওয়ায় কোরাইশদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র
মুসলমানদের এই হিজরত দেখে মক্কার মুশরিকদের ঔদ্ধত্য চরম আকার ধারণ করে। তারা রাতের আঁধারে দারুন নদওয়াতে এক গোপন বৈঠকে বসে। সেখানে নবীজিকে বন্দী করা, নির্বাসিত করা অথবা চিরতরে হত্যা করার মতো তিনটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। অবশেষে, ১১ জন বাছাই করা কোরাইশ যুবককে নিয়ে একটি দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়, যারা ফজরের আগেই নবীজিকে একযোগে হত্যা করবে। এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সফল হবে বলেই তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছিল।
আবু জেহেল তার সঙ্গীদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে বলছিল, ‘মুহাম্মদ বলে, তোমরা তার অনুসরণ করলে আরব-অনারবের বাদশাহ হবে, মৃত্যুর পর জান্নাতে থাকবে। আর যদি তোমরা তাকে না মারো, তবে সে তোমাদের হত্যা করবে এবং মৃত্যুর পর আগুনে পুড়াবে।’
আল্লাহর কৌশল: কাফেরদের সকল পরিকল্পনা ব্যর্থ
কোরাইশদের ষড়যন্ত্রের জবাবে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে হিজরতের ঐশী নির্দেশ দিলেন। সুরা আনফালের ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা তাদের ষড়যন্ত্র করছিল আর আল্লাহ আপন কৌশল করছিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোত্তম কৌশলী।’
আল্লাহর নির্দেশে নবীজি (স.) অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে তাঁর বিছানায় হজরত আলী (রা.)-কে শুইয়ে দিলেন এবং নিজের গায়ে জড়ানো সবুজ চাদরটি তাকে দিলেন। কোরাইশরা তখন নবীজির ঘরের চারপাশে অপেক্ষা করছিল। নবীজি (স.) এক মুঠো মাটি নিয়ে বাইরে এলেন এবং সুরা ইয়াসিনের ৯ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করতে করতে সেই মাটি তাদের দিকে নিক্ষেপ করলেন। এতে আল্লাহ তাআলা তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিলেন এবং তারা নবীজিকে দেখতে পেল না।
গুহার আশ্রয় ও সফল হিজরত
নবীজি (স.) তখন হজরত আবু বকর (রা.)-এর বাড়িতে গেলেন। এরপর উভয়ে ইয়েমেনের পথে মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। মক্কা থেকে কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত সওর পাহাড়ের গুহায় তাঁরা তিন রাত আশ্রয় নিলেন।
এই মহান হিজরতের মধ্য দিয়ে ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এটি ছিল ইসলাম, মুসলমান এবং নবীজি (স.)-এর জীবনের একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’। হিজরতের পর মুসলমানদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে এবং ইসলামের আলো দ্রুত দিগ-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে।
(আর রাহিকুল মাখতুম, জাদুল মাআদ, সহিহ বুখারি, ইবনে হিশাম, মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস)
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: