শনিবার, ১৫ই নভেম্বর ২০২৫, ১লা অগ্রহায়ণ ১৪৩২


COP30 সম্মেলনে ফসিল ফুয়েল লবি, নীতি উল্টোপাল্টি ও লিঙ্গ বিতর্কে উত্তেজনা


প্রকাশিত:
১৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৪২

আপডেট:
১৫ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৪৩

ফাইল ছবি

বেলেম, ব্রাজিল: এ বছরের COP30 জলবায়ু সম্মেলন শুরু থেকেই নানা বিতর্কে ঘেরা। বিশেষ করে ফসিল ফুয়েল লবিস্টদের অস্বাভাবিক উপস্থিতি, জলবায়ু নীতিতে পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবং “লিঙ্গ” শব্দের সংজ্ঞা নিয়ে দেশগুলোর তীব্র মতভেদ আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ফসিল ফুয়েল লবিস্টদের চাপ বাড়ছে

এবারের সম্মেলনে বিপুল সংখ্যক ফসিল ফুয়েল শিল্পের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন, যা জলবায়ু আলোচনায় কর্পোরেট প্রভাব বৃদ্ধির নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে এগোতে হলে এই প্রভাব সীমিত করা জরুরি।

লিঙ্গ সংজ্ঞা নিয়ে বিভাজন

সম্মেলনে লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে একটি নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরির উদ্যোগ রয়েছে। তবে “লিঙ্গ” শব্দটি কীভাবে সংজ্ঞায়িত হবে—এটি নিয়ে কয়েকটি দেশের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।
একদল দেশ বিষয়টিকে কেবল জীববৈজ্ঞানিক লিঙ্গে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে, অন্যদিকে অনেক দেশ চাইছে এটি আরও বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হোক। জলবায়ু সংকটে নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা ব্যাপক পরিসরের লিঙ্গভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে মত দিচ্ছেন।

উষ্ণায়নের গতিপথ উদ্বেগজনক

বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন দেশের বর্তমান প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলেও বৈশ্বিক তাপমাত্রা এ শতকের শেষে প্রায় ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে—যা প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য থেকে অনেক বেশি। ইতিমধ্যেই তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৩ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা চরম আবহাওয়া, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়াচ্ছে।

জলবায়ু ও স্বাস্থ্য: নতুন অগ্রাধিকার

এই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি আন্তর্জাতিক জলবায়ু-স্বাস্থ্য কর্মপরিকল্পনা চালু করা হয়েছে। এতে ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে স্বাস্থ্য অভিযোজন ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক ঝুঁকিপূর্ণ দেশ দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ-স্বাস্থ্য প্রস্তুতির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে।

বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা

এই আলোচনায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উঠে এসেছে। উপকূলীয় অঞ্চল, সুন্দরবন ও হাওর এলাকায় স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানগুলোকে জলবায়ু অভিযোজনের কার্যকর উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ন্যায্য রূপান্তর, জলবায়ু অর্থায়ন এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রকল্পে সরাসরি সহায়তা নিশ্চিতের দাবি তুলছে।

সামনে কী?

COP30-এ গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যৎ জলবায়ু নীতির দিক নির্ধারণ করবে। তবে ফসিল ফুয়েল লবি, রাজনৈতিক মতভেদ ও আর্থিক অনিশ্চয়তা সম্মেলনের অগ্রগতি ধীর করে দিতে পারে।
বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবিক, ন্যায্য এবং বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা ঠেকানো যাবে না।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top