আজীবন আ. লীগের পাশে থাকার ঘোষণা দেওয়া জসিম এবার বিএনপির প্রার্থী
প্রকাশিত:
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:৪০
আপডেট:
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৯
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন আহমেদ। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) তিনি নিজেই মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। যদিও বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে, ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী তালিকায় জসিম উদ্দিন আহমেদের নাম রয়েছে।
মনোনয়নের খবর প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জসিমের অতীতের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন বক্তব্য ও ছবি নতুন করে ছড়িয়ে পড়ে। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এসব ছবিতে তাকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা যায়।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের বিতর্কিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জসিম উদ্দিন আহমেদ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনের সময় একটি সভায় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এই গাছবাড়িয়া ও চন্দনাইশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগসহ দলমত নির্বিশেষে আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথেই থাকব।’ এসময় উপস্থিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘জসিম ভাই এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’, ‘জসিম ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ –এমন স্লোগান দিলে তাকেও তাতে কণ্ঠ মেলাতে দেখা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও নগর যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন বাবরের সঙ্গে জসিম উদ্দিন আহমেদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এসব নেতার সঙ্গে তার একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী ‘জেসিকা গ্রুপ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয়ে তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার পায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন সাবেক দুই পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ ও শহীদুল হকের ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথেও আমার ছবি আছে। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আমি সকলের দোয়া চাই।’ তার আজীবন আওয়ামী লীগের পাশে থাকার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কল কেটে দেন।
এদিকে, বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শফিকুল ইসলাম রাহী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন ‘মানি ইজ পাওয়ার’। আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘চট্টগ্রাম-১৪তে প্রথমে এক আওয়ামী লীগের নেতাকে জেলা সদস্য করা হলো, অন্যদিকে আজ আওয়ামী দোসরকে সংসদে যাওয়ার মনোনয়ন দেওয়া হলো। জনগণ কি এটা সহজে মেনে নিচ্ছে? আমাদের ভাবমূর্তি কোন দিকে যাচ্ছে, ভেবে দেখার সময় কি আসেনি?’
জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম রাহী বলেন, ‘বিএনপির ক্ষুদ্র কোনো কর্মী মনোনয়ন পেলেও আমি সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিতাম। দলের পক্ষ থেকে একজন আওয়ামী দোসরকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমি খুবই হতাশ হয়েছি।’
জানা গেছে, জসিম উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। চট্টগ্রামের আলোচিত হৃদয় তরুয়া হত্যা মামলা ও জুলাইযোদ্ধা এমদাদকে গুলির মামলাসহ একাধিক মামলায় তিনি আসামি। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত এক হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে ১০ জুলাই পদ্মা ব্যাংকের ঋণখেলাপি মামলায় জসিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী তানজিনা সুলতানাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। আরও আগে গত ৩০ এপ্রিল একই মামলায় আদালত তাদেরকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: