দোয়া কবুলের রহস্য লুকিয়ে আছে আল্লাহর এসব নামের মধ্যে
প্রকাশিত:
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:২৫
আপডেট:
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:১৮

দোয়া হলো মুমিনের হাতিয়ার এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করতে পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন: ৬০) রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই।’ (ইবনু মাজাহ: ৩৮২৯) আরেক হাদিসে তিনি বলেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করতে পারে না।’ (তিরমিজি: ২১৩৯)
দোয়া কবুলের তিনটি রহস্যময় রূপ
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া তিনভাবে কবুল করেন- ১. দুনিয়াতেই তার চাওয়া পূর্ণ করে দেন। ২. আখেরাতের জন্য তার সওয়াব সংরক্ষণ করেন। ৩. এর বিনিময়ে বড় কোনো বিপদ দূর করে দেন। (মুসনাদে আহমদ: ১১১৩৩)
আল্লাহর নাম দোয়া কবুলের চাবিকাঠি
দোয়া কবুলের অন্যতম রহস্য নিহিত আছে আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ দ্বারা তাঁকে ডাকার মধ্যে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর জন্য রয়েছে সর্বোত্তম নামসমূহ; সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক।’ (সুরা আরাফ: ১৮০)
বিশেষ নামসমূহ দ্বারা দোয়ার আমল
১. اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকা বিআন্না লাকাল হামদ, লা ইলাহা ইল্লা আনতাল মান্নান, বাদীউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যুম।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি এই মর্মে যে, সকল প্রশংসা কেবল আপনারই। আপনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি অশেষ দাতা, আসমান ও জমিনের অনন্য স্রষ্টা। হে মহিমা ও মর্যাদার অধিকারী, হে চিরঞ্জীব, স্বয়ংস্থিত।’
হাদিসে এসেছে, এই দোয়ায় ইসমে আজম রয়েছে, এই নামগুলো দ্বারা ডাকলে আল্লাহ সাড়া দেন এবং দান করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৯৫)
২. اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকা আন্নি আশহাদু আন্নাকা আনতাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আল-আহাদুস সামাদ, আল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল-লাহু কুফুওয়ান আহাদ।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি-ই আল্লাহ। আপনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি একক, আপনি অমুখাপেক্ষী। আপনি জন্ম দেননি, আপনিও জন্মগ্রহণ করেননি, আর আপনার সমতুল্য কেউ নেই।’
এই দোয়া প্রসঙ্গেও হাদিসে এসেছে, এখানে আল্লাহর মহান নাম রয়েছে, যা দ্বারা চাইলে তিনি দান করেন এবং ডাকলে সাড়া দেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৯৩)
দোয়ায় উল্লেখিত ইসমে আজমসমূহ
‘লা ইলাহা ইল্লা আনতাল মান্নান’, ‘ইয়া বাদিয়াস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ’, ‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’, ‘ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়ুম’- এসব আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমা প্রকাশকারী নাম। হাদিস অনুযায়ী, এই নামগুলো দ্বারা তাঁকে ডেকে দোয়া করা বিনয় ও আন্তরিকতার পরিচায়ক। এছাড়াও ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ’ গুণবাচক নামগুলো দোয়ার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকর এবং নবীজি (স.) এগুলোকে ইসমে আজম হিসেবে অভিহিত করেছেন।
দোয়া কবুলের অন্যান্য শর্ত ও আদব
আল্লাহর সুন্দর নাম উচ্চারণ ও তাঁর প্রশংসার পর দরুদ শরিফের মাধ্যমে দোয়া শুরু ও শেষ করা (আবু দাউদ: ১৪৮১)
দোয়া কবুলে ধৈর্য ধারণ করা ও তাড়াহুড়া না করা (তিরমিজি: ৩৩৮৭)
দোয়ায় আন্তরিকতা ও বিনয় প্রকাশ করা (সুরা আল-আরাফ: ৫৫)
হারাম উপার্জন ও হারাম খাদ্য থেকে বিরত থাকা (তিরমিজি: ২৯৮৯)
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ পালন করা (সহিহুল জামে: ৭০৭০)
আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা (তিরমিজি: ৩৬০৪)
আল্লাহর নামসমূহ দোয়া কবুলের একটি মহামূল্যবান দরজা। উপরোক্ত শর্ত ও আদব মেনে তাঁর মহান নামগুলোতে ডাকলে, ইনশাআল্লাহ, দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর যথাযথ নামে ডাকতে ও সর্বদা দোয়া কবুলের সৌভাগ্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: