৪১ শতাংশ মাশুল বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে
প্রকাশিত:
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:২৮
আপডেট:
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:০৯

চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সেবা খাতে ট্যারিফ (মাশুল) বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রায় ৪০ বছর পর রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে নতুন ট্যারিফের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যা সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হয়েছে। মাশুল বাড়ায় ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সবমিলিয়ে এবার গড়ে ট্যারিফ বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪১ শতাংশের মতো। তবে বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমান সময়ে ট্যারিফ বাড়ানোর বিষয়টি উদ্বেগের।
চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৫২টি খাতে মাশুল আদায় করা হয়। সেখান থেকে ২৩টি খাতে সরাসরি বর্ধিত হারে ট্যারিফ আদায় অনুমোদন হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বন্দর ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আদায়যোগ্য ভাড়া, টোল, রেইল, ফি ও মাশুলের ক্ষেত্রে নতুন ট্যারিফ তফসিল কার্যকর হয়েছে। মাশুলের ক্ষেত্রে ডলারপ্রতি বিনিময়মূল্য ধরা হয়েছে ১২২ টাকা। ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়লে মাশুলও বাড়বে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ডলার হিসেবে মাশুল আদায় করে।
প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সবচেয়ে বেশি মাশুল বেড়েছে কনটেইনার পরিবহন খাতে। প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা থেকে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা বেড়ে নতুন মাশুল দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা। এ হিসেবে প্রতি কনটেইনারে মাশুল বেড়েছে গড়ে ৩৭ শতাংশ।
আবার কনটেইনারবাহী জাহাজের ক্ষেত্রে আমদানি কনটেইনারের জন্য ৫ হাজার ৭২০ টাকা ও রপ্তানি কনটেইনারের জন্য ৩ হাজার ৪৫ টাকা মাশুল বেড়েছে। প্রতিটি কনটেইনার ওঠানামার ক্ষেত্রে মাশুল বাড়ানো হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। কনটেইনারের প্রতি কেজি পণ্যের জন্য মাশুল আগের ১ টাকা ২৮ পয়সার সঙ্গে আরও ৪৭ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। সার্বিকভাবে শুধু ওঠানামাসহ কনটেইনার পরিবহন খাতেই মাশুল বেড়েছে ২৫ থেকে ৪১ শতাংশ।
১৯৮৬ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সেবা খাতে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছিল। প্রায় ৪০ বছর পর অন্তর্বর্তী সরকার বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘এই মুহূর্তে ট্যারিফ বাড়ানো উচিত হয়নি। বন্দর যখন ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল, তখন আমরা আপত্তি করেছিলাম। আর যদি বাড়াতেই হয় তাহলে যেন সেটা ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে রাখা হয়, সেটা বলেছিলাম। কিন্তু এখন ৪১ শতাংশ হারে ট্যারিফ কার্যকর করা হয়েছে। বন্দরের উচ্চহারের ট্যারিফ বৃদ্ধির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে চাপ বাড়াবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘ট্যারিফ বাড়ানোর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেবা খাতের ওপর ভিত্তি করে ট্যারিফ বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪১ শতাংশের মতো। এই ট্যারিফ সোমবার থেকে কার্যকরের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বন্দরের বিভিন্ন সফটওয়্যার ও সিস্টেমে আপডেট করার কাজ চলছে, যা শেষ করতে সময় লাগবে। সিস্টেম আপডেট করার কাজ শেষে পুরোপুরি ট্যারিফ আদায় করা হবে।’
দেশে আমদানি-রপ্তানিকেন্দ্রিক সমুদ্র বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ এবং কনটেইনার ও পণ্য পরিবহনের ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সবচেয়ে বেশি ট্যারিফ বেড়েছে কনটেইনার পরিবহন খাতে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: