শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩২


মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই


প্রকাশিত:
১০ মে ২০২৫ ১১:১৮

আপডেট:
১০ মে ২০২৫ ১৭:০৫

ছবি সংগৃহীত

বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক, লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী (৮৭) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শনিবার (১০ মে) ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার মেয়ে শারমিন আব্বাসী।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে বাধ্যর্কজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। সর্বশেষ গতকাল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী উপমহাদেশের এক প্রখ্যাত সংগীত পরিবারের সন্তান। বাবা আব্বাস উদ্দীন আহমেদ পল্লীগীতির কিংবদন্তী শিল্পী। এদেশের পল্লীসংগীতকে তিনিই প্রথম বিশ্বের কাছে জনপ্রিয় করেছেন। চাচা আব্দুল করিম ছিলেন পল্লীগীতি ও ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালি গানের জনপ্রিয় শিল্পী। বড় ভাই বিচারপতি মোস্তফা কামাল আইনবিশারদ। মোস্তফা কামালের মেয়ে নাশিদ কামালও একজন বরেণ্য শিল্পী। বোন ফেরদৌসী রহমান দেশের প্রথিতযশা বহুমাত্রিক প্রতিভার সংগীতজ্ঞ হিসেবে সমাদৃত।

মোস্তফা জামান আব্বাসী ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে ৮ ডিসেম্বর ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কলকাতায়। এই পরিবারের সঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা ছিল। মুস্তাফা জামানের শিক্ষাজীবন কলকাতায় শুরু হয়। তিনি ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে এমএ পাস করেন। তিনি সঙ্গীতসাধনা ও সাহিত্যচর্চায় নিজস্ব অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। সঙ্গীত বিষয়ক গবেষণাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তিনি বেতার ও টেলিভিশনে সঙ্গীতবিষয়ক অনেক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। পত্র-পত্রিকাতে তিনি একজন সুখপাঠ্য কলাম লেখক হিসেবেও সুপরিচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স ও এমএ, হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং অধ্যয়ন, দীর্ঘদিন শিল্পগোষ্ঠীর মহাব্যবস্থাপক ছিলেন, ছিলেন ব্যবসা সফল ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন তিনি। পঁচিশটি দেশে ভাটিয়ালি, বিচ্ছেদী, ভাওয়াইয়া, চটকা, নজরুলগীতি পরিবেশন করে খ্যাতি অর্জন করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ইউনেস্কোর ছত্রছায়ায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব মিউজিকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এগারো বছর, একাধিকবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন সঙ্গীতজ্ঞদের বিশ্ব অধিবেশনে।

দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক ও সংগ্রাহক হিসেবে কয়েক হাজার গান তার সংগ্রহে ছিল। বাংলা লোকসঙ্গীতের মূল্যবান লালনের গান, ভাটিয়ালি, বিচ্ছেদী, ভাওয়াইয়া, চটকা ছিল তার সংগ্রহে। সম্পাদিত ‘দুয়ারে আইসাছে পালকি’ ও স্বাধীনতা দিনের গান’ উল্লেখযোগ্য সংকলন গ্রন্থ। ‘জার্নাল অব ফোক মিউজিকের’র সম্পাদক ছিলেন তিনি। ‘লোকসংগীতের ইতিহাস’, ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি’, (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’ প্রথম খণ্ডে সর্বমোট ছ’শত গান স্বরলিপি ও বিবক্ষণসহ প্রকাশিত, দেশে বিদেশে প্রশংসিত।

কবি, লেখক ও গবেষক মুস্তফা জামান আব্বাসীর ২১টি গ্রন্থ পাঠকনন্দিত। জীবনকালে তিনি নানা পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, লালন পুরস্কার, নজরুল একাডেমি পুরস্কার, আব্বাসউদ্দিন গোল্ড মেডেল, এ্যাপেক্স ফাউন্ডেশন পুরস্কার, একুশে পদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক পুরস্কার, সিলেট মিউজিক পুরস্কার, মানিক মিয়া পুরস্কার, নাট্যসভা উপস্থাপক পুরস্কার, বাংলা সন চৌদ্দশতবার্ষিকী পুরস্কার ইত্যাদি। এশিয়া মিডিয়া সামিট, আন্তর্জাতিক রুমি কর্মকাণ্ড, আন্তর্জাতিক সুফি সম্মেলন, লোকসংস্কৃতি সেমিনার, রেডিও টেলিভিশনে বক্তব্য ও গানের জলসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top