শনিবার, ২৩শে আগস্ট ২০২৫, ৮ই ভাদ্র ১৪৩২


চিকিৎসকের জবানবন্দি

পুলিশের ভয়ে ইবনে সিনায় গোপনে চিকিৎসা দেন চিকিৎসকরা


প্রকাশিত:
২০ আগস্ট ২০২৫ ২১:৩৫

আপডেট:
২৩ আগস্ট ২০২৫ ২০:৪৯

ছবি সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একজন চিকিৎসকের জবানবন্দিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। তার সাক্ষ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলমান ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ অসংখ্য মানুষকে ইবনে সিনা হাসপাতালে গোপনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওই সময় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নজরদারি ও বাধার কারণে চিকিৎসকেরা আহতদের ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ঠিকানা এবং বিভিন্ন রোগের কথা উল্লেখ করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষী হিসেবে বুধবার (২০ আগস্ট) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে জবানবন্দি দেন ডা. হাসানুল বান্না। তিনি রাজধানীর কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ৪৩ বছর বয়সী এই চিকিৎসক বলেন, “২০২৪ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই এবং ২, ৩, ৪ ও ৫ আগস্টসহ পরবর্তী সময়ে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে চিকিৎসা দিয়েছি। ১৮ জুলাই দুপুরের পর থেকেই আমাদের হাসপাতালে আহতরা আসতে শুরু করে। তাদের অনেকেরই অপারেশন করতে হয়েছে। কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যার পর পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসায় বাধা দেয়। তারা আহতদের ভর্তি করতে নিষেধ করে এবং রেজিস্টার দেখে রোগীদের তালিকা নিয়ে যায়।”

ডা. বান্না জানান, ১৯ জুলাই সকাল থেকে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কর্মীরা হাসপাতালের গেট অবরোধ করে বসেছিল। তারা কোনো রোগীকে হাসপাতালে ঢুকতে বা বের হতে দেয়নি। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স চলাচলেও বাধা দেয়। ওই দিন মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে গুলিবিদ্ধ হন ইবনে সিনা হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট মিতুর স্বামী মোস্তাকিন বিল্লাহ। মোস্তাকিনকে বিকল্প পথে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও অ্যাম্বুলেন্স বের হতে না দেওয়ায় তাকে অন্য হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে ইবনে সিনা ধানমন্ডি শাখায় নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জবানবন্দিতে এই সাক্ষী আরও বলেন, “১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হাসপাতালে আসা গুলিবিদ্ধদের ভিন্ন নামে ও ভিন্ন রোগের কথা উল্লেখ করে লুকিয়ে রেখে গোপনে চিকিৎসা দেই আমরা। মূলত পুলিশের নজরদারি এড়াতে তাদের সাধারণ ওয়ার্ডে না রেখে পোস্ট-অপারেটিভ, আইসিইউ ও বিশেষ কেবিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দেন ইবনে সিনা হাসপাতালের চিকিৎসকরা।”

ডা. বান্না ওই ঘটনার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকজনকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “এসব ঘটনার জন্য শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ (পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী), তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ আওয়ামী লীগের নেতা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়ী মনে করি। আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে এ ঘটনার সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি।”

এদিন (বুধবার) হাসানুল বান্না ছাড়াও আরও তিনজন সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, একই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন ও শহীদ শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল। এ মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ১৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ডা. বান্না হলেন ১৫ নম্বর সাক্ষী।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন সাক্ষীদের জেরা করেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্য আইনজীবী।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top