শনিবার, ২৩শে আগস্ট ২০২৫, ৮ই ভাদ্র ১৪৩২


চীনের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী

ভারত এখন বুঝেছে, চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা কেন দরকার’


প্রকাশিত:
২৩ আগস্ট ২০২৫ ১১:৫৫

আপডেট:
২৩ আগস্ট ২০২৫ ১৪:১৮

ছবি সংগৃহীত

চীনের সরকারি গণমাধ্যম সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র ভারত সফর নিয়ে খবরাখবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে।

ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে ওয়াং ই-র সীমান্ত বিবাদ নিয়ে বৈঠকের ওপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ওই খবরাখবরে।

চীনের গণমাধ্যমে এমনটাও লেখা হয়েছে যে, আমেরিকার দিক থেকে ভারতের ওপরে বাড়তি শুল্ক আরোপ করে যে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে ভারত তার রণনীতিতে পরিবর্তন করতে চাইছে এবং ওয়াং ই-র ভারত সফর তারই অংশ।

চীনা গণমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারতের সঙ্গে সেদেশের মজবুত সম্বন্ধ 'গ্লোবাল সাউথ'-এর জন্য লাভজনক হবে।

এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলিকে এক কথায় 'গ্লোবাল সাউথ' বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে।

‘মার্কিন শুল্কের কারণে ভারত-চীন কাছাকাছি আসছে’

চীনের সরকারি গণমাধ্যমে ওয়াং ই-র ভারত সফরকে ইতিবাচক হিসাবে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে দুটি দেশই যে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে ইচ্ছুক, সেই বিষয়টির ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে চীনের গণমাধ্যমে। এই প্রসঙ্গেই আমেরিকা যে ‘একতরফা চাপ’ দেওয়ার নীতি নিয়েছে, সেটাও উল্লেখ করেছে চীনের সরকারি গণমাধ্যম।

সরকারি ইংরেজি দৈনিক ‘চায়না ডেইলি’তে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তিয়ানজিনে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি হিসাবেই ওয়াং ই-র ভারত সফরকে দেখা হচ্ছে।

ওই সম্পাদকীয়তেই লেখা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসন যখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর এক শুল্ক-যুদ্ধ শুরু করেছে, তখন ভারত ‘এই কঠিন বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে যে আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও মার্কিন শুল্ক থেকে রক্ষা পায়নি।’

আরও লেখা হয়েছে, ‘মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার অবস্থায় আছে ভারত, কারণ তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে অস্বীকার করেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত কৌশলগত স্বাধীনতার গুরুত্ব বুঝতে পারছে এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের কৌশলগত সুবিধা পেতে পারে আবার নীতিগত নমনীয়তাও বজায় রাখতে পারে।’

সরকারি সংবাদপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে যে, ভারত এশিয় বাজারের দিকে ঝুঁকছে। কারণ ‘রফতানির জন্য আমেরিকার বাজারের ওপরে তাদের অতিরিক্ত নির্ভরতা ক্রমবর্ধমান শুল্কের কারণে তাদের কাছে একটা দুর্বলতা হয়ে উঠেছে।’

জাতীয়তাবাদী সংবাদ ও প্রবন্ধের ওয়েবসাইট ‘গুয়াঞ্চা’য় প্রকাশিত একটি লেখায় ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের লিন মিনওয়াংয়ের একটি মন্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকার সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্কে পরিবর্তন আনতে পারে।’

তবে তিনি এও জুড়ে দিয়েছিলেন, ‘সম্পর্কের উন্নতিকে স্বাগত জানায় চীন কিন্তু জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত কোনও ইস্যুতেই তারা সমঝোতা করবে না।’

কিছু বিষয়ে দ্বিমত

যদিও ওয়াং ই-র ভারত সফর নিয়ে চীন ও ভারতের বক্তব্যে ফারাক লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষত তাইওয়ান এবং তিব্বতের সাঙপো নদীর ওপরে চীনের প্রস্তাবিত বাঁধের ইস্যুতে দুটি দেশের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে অমিল দেখা গেছে।

চীনা গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে, ওয়াংই-র সঙ্গে বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন যে 'তাইওয়ান চীনের অংশ'।

তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৯শে অগাস্ট যে বিবৃতি জারি করেছে, সেখানে লেখা হয়েছে, ‘চীনের পক্ষ থেকে তাইওয়ানের ইস্যুটা তোলা হয়েছিল, কিন্তু ভারতের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় য়ে এই বিষয়ে ভারতের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয় নি।’

স্পষ্টভাবে এটাও বলা হয়, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই তাইওয়ানের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক, কারিগরি ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে, এবং ভবিষ্যতেও তা থাকবে।‘

এদিকে, ভারত শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে ২২শে এপ্রিল পর্যটকদের ওপরে হামলার ঘটনার পরে ভারতীয় সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালিয়ে পাকিস্তানে ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’গুলির ওপরে হামলা চালায়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময়ে ‘সন্ত্রাসবাদের ইস্যু জোরেশোরে’ তুলেছিল দিল্লি। এটাও বলা হয় ওই বিবৃতিতে যে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের অন্যতম মূল উদ্দেশ্যের একটা হল ‘সন্ত্রাসবাদের কুফল মোকাবেলা করা’।

ওয়াং ই-কে উদ্ধৃত করে ওই বিবৃতিতে এটাও লেখা হয়েছিল যে, তিনি বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা করাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।’

তবে চীনের তরফে যে বয়ান প্রকাশ করা হয়েছিল, সেখানে ওয়াং ই-র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা এস জয়শঙ্কর ও অজিত ডোভালের যেসব বৈঠক হয়েছে, সেগুলিতে ‘সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ে আলোচনার কোনও উল্লেখ নেই।

আবার ভারতের বিবৃতিতে লেখা হয়েছে তিব্বতের ইয়ারলুঙ সাংপোর (ভারতে যেটি ব্রহ্মপুত্র নদ) ভাটি অঞ্চলে চীন যে অতিবৃহৎ বাঁধ দিচ্ছে, সে ব্যাপারে দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বৈঠকে এস জয়শঙ্কর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এবং এই ইস্যুতে 'স্বচ্ছতার প্রয়োজনের' ওপরে জোর দিয়েছেন।

তবে এই ইস্যুর কোনও উল্লেখই চীনের বিবৃতিতে নেই। সূত্র: বিবিসি বাংলা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top