আরজে থেকে যেভাবে পর্দার হাসিনা নুসরাত ফারিয়া
প্রকাশিত:
১৯ মে ২০২৫ ১১:৩৬
আপডেট:
১৯ মে ২০২৫ ১১:৫৬

এই সময়ে ঢালিউডের আলোচিত অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া চট্টগ্রামে জন্ম হলেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে। ২০২১ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা অভিনেত্রীর ভাই ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। ছোটবেলায় তিনিও হতে চেয়েছিলেন একজন দেশপ্রেমিক সৈনিক। কিন্তু জীবন তাকে নিয়ে এসেছে বিনোদন জগতে।
পর্দার হাসিনার মিডিয়ায় পথচলা শুরু হয় আরজে হিসেবে। এরপর জনপ্রিয়তা পান উপস্থাপনায়। আরটিভির ‘ঠিক বলছেন তো’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেলিভিশনে উপস্থাপনা শুরু করেন তিনি। ২০১২ সালে এনটিভির ‘থার্টিফাস্ট ধামাকা কক্সবাজার’ অনুষ্ঠানে উপস্থাপক হিসেবে নজর কাড়েন নুসরাত ফারিয়া। ২০১৩ সালে বলিউড তারকা সুনিধি চৌহানের কনসার্ট উপস্থাপনাও তাকে এনে দিয়েছে ব্যাপক প্রশংসা। ‘লেট নাইট কফি উইথ নুসরাত ফারিয়া’, ‘ক্লিয়ার এসএ লাইভ স্টুডিও’, ‘লাক্স ওয়ার্ল্ড অব গ্ল্যামার’ ও রেডিও ফুর্তির ‘নাইট শিফট উইথ ফারিয়া’— এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠেন টেলিভিশন স্ক্রিনের এক পরিচিত মুখ।
অভিনেত্রী ও উপস্থাপনার বাইরেও নুসরাত ফারিয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন মডেল ও গায়িকা হিসাবেও। তিনি ‘ডোর’ ফ্যাশন হাউসের ব্র্যান্ড মডেল হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, সিম্ফনি, সিটিসেলসহ বহু বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছেন অভিনেত্রী। গানেও রেখেছেন সাড়া জাগানো উপস্থিতি, যা তাকে শোবিজের এক বহুমাত্রিক প্রতিভায় রূপ দিয়েছে।
এরপর একদিন হঠাৎ ডাক আসে সিনেমার। দুই চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বড়পর্দার জন্য দাঁড়ালেন ক্যামেরার সামনে। ২০১৫ সালে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘আশিকী’ দিয়ে বড়পর্দায় অভিষেক অভিনেত্রীর। এ সিনেমার মাধ্যমেই উপস্থাপিকা থেকে পরিণত হন রুপালি পর্দার নায়িকায়। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি নুসরাতকে।
দুই বাংলায় একের পর এক সিনেমায় কাজ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। এরপর কেটে গেল অনেক বছর। দিন দিন দুই বাংলার জনপ্রিয় নায়িকা হয়ে উঠেন নুসরাত ফারিয়া। বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ‘হিরো ৪২০’, ‘বাদশা দ্য ডন’, ‘প্রেমী ও প্রেমী’, ‘অপারশেন সুন্দরবন’, ‘বস ২’, ‘বিবাহ অভিযান’ উল্লেখযোগ্য।
তবে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনা ও সমালোচনা দুই-ই যোগ করেন ক্যারিয়ারে। এটি তার জীবনে সিনেমাপ্রেমীদের বিভক্তি গড়ে দেয়। শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর সিনেমা ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এ সিনেমাটি পরিচালনা করেন ভারতের খ্যাতিমান পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। এ সিনেমায় শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং শেখ হাসিনা চরিত্রে অভিনয় করেন নুসরাত ফারিয়া। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর পর্দার শেখ হাসিনাও দেশ ছাড়ছিলেন। তবে হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিলেও নুসরাত ফারিয়ার গন্তব্য ছিল থাইল্যান্ডে।
গতকাল রোববার (১৮ মে) শেখ হাসিনার মতো দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয় অভিনেত্রীকে। ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভাটারা থানায় হস্তান্তর করে।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত ভারতেই অবস্থান করছেন স্বৈরাচার আওয়ামী নেত্রী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা হচ্ছে।
সেই আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা থাকায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল ঢালিউড অভিনেত্রী পর্দার হাসিনা নুসরাত ফারিয়ার বিরুদ্ধে। ওই মামলায় তাকে আটক করা হয়।
এ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এসএন মো. নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়কার মামলা রয়েছে ভাটারা থানায়। যেহেতু মামলা রয়েছে, সে জন্য ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দিয়েছে। এরপর ভাটারা থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সংশ্লিষ্ট ২৮৩ জন ও অজ্ঞাতনামা তিন-চারশজনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেছেন এনামুল হক। মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থ জোগানদাতা হিসেবে আসামি করা হয় অভিনেত্রী নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে।
এদিকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নুসরাত ফারিয়া চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যাচ্ছিলেন। যার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আগেই নেওয়া ছিল।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: