সোমবার, ২৭শে অক্টোবর ২০২৫, ১২ই কার্তিক ১৪৩২


‘আমাকে মারবে বখতিয়ার-আলাউদ্দিন-হেলাল’, যুবদলকর্মী আলমের আশঙ্কা ছিল আগেই


প্রকাশিত:
২৭ অক্টোবর ২০২৫ ১০:১০

আপডেট:
২৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৪৭

ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের রাউজানে গেল শনিবার প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে যুবদলকর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলমকে। এই হত্যাকাণ্ডের পর কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে; যেগুলোতে দেখা যায় এমন ঘটনার আশঙ্কা আগে থেকেই করছিলেন আলম।

ভিডিওগুলোতে আলমগীর আলমকে যেসব কথা বলতে দেখা যায় সেখানে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী রায়হান ও বখতিয়ার ফকিরসহ বেশ কয়েকজনের নামও উঠে আসে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে আলমগীরের মরদেহ নেওয়া হয়েছে রাউজানে।

শনিবার বিকেলে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় আলমকে। এ সময় তার স্ত্রী ও সন্তান পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নিহত আলমগীর। বিভিন্ন মামলায় প্রায় ১২ বছর কারাভোগ শেষে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি।

আলমগীরের মৃত্যুর পর তিনটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে আলমগীর কথা বলছেন এক ব্যক্তির সঙ্গে। সেখানে আলমগীরকে উদ্দেশ করে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আপনার গ্রুপের মধ্যে বখতিয়ার ফকিরের লোক ঢুকিয়ে দেবে। এরপর আপনাকে খুন করবে, ফিল্ড খালি করার জন্য।’

তখন আলমগীর বলেন, আমাকে কি এক সপ্তাহের মধ্যে মেরে ফেলবে? উত্তরে ওই লোক বলেন, ‘সুযোগ পেলে ওটা আধা ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে মেরে ফেলবে।’ আলমগীরের সঙ্গে কথা বলা ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আরেকটি সমাবেশে বক্তব্যে আলমগীর বলেন, ‘একমাস ধরে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এলাকাবাসী আমাকে পাহাড়া দিচ্ছে। আমাকে যেকোনো মুহূর্তে মেরে ফেলবে। আমাকে মারবে বখতিয়ার ফকির, আলাউদ্দিন, হেলাল। এরা আমাকে মেরে ফেলবে প্রকাশ্যে হুমকি দিছে। আমি মরলে দায় ওদের। আমি নিরাপত্তা চাই। বউ-বাচ্চা নিয়ে বাঁচতে চাই।’

আরেকটি ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছেন আলমগীর। ‘সন্ত্রাসী’ রায়হানের নাম উল্লেখ করে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে উদ্দেশ করে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি যে শোডাউন করিয়েছ আতঙ্ক সৃষ্টি করে, আমাকে তো মেরেও ফেলতে পারত, তুমি তো ও রকম মানুষ নিয়ে এসে আমাকে মেরে ফেলতে পার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে তাড়ানোর জন্য তুমি এসব করছ।...ওরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসেছে আমাকে থ্রেট দিতে।’

নিজে কারাগারে থাকার প্রসঙ্গ টেনে আলমকে মুঠোফোনে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বাঁচতে চাই। ১৭ বছর আমি স্ত্রী-সন্তানকে ছেড়ে কারাগারে ছিলাম। এখনো যদি তোমাদের কারণে কষ্টে থাকি, আমি কার কাছে যাব। আমাকে আইনের আশ্রয় নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘তাদের অস্ত্রসহ কেন আনলে। তিনটি মোটরসাইকেলে অস্ত্র ছিল। আমি তো একলা ছিলাম। জনগণ পাশে আসায় ওরা চলে গেছে। নইলে তো আমার মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল।

নিজেদের নিরাপত্তা আশঙ্কা জানিয়ে হত্যার শিকার আলমগীরের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামীকে খুন করার জন্য রায়হান বাহিনীকে ভাড়া করা হয়েছে। ট্রাক দিয়ে পথ আটকে গুলি করে আমার জামাইকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে বখতিয়ার ফকির জড়িত৷’

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সহকারি পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনীয়া সার্কেল) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘তার (আলমগীর) সঙ্গে যাদের বিরোধ ছিল এবং ভিডিওগুলো পর্যালোচনা করে তদন্ত চলছে। হত্যার সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে এখন কিছু বলতে চাই না। এই ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। আমাদের অভিযান চলছে।’

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘হত্যার ঘটনাটিতে কে বা কারা জড়িত, তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। নিহত আলম যাদের আগ থেকে সন্দেহ করতেন, তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top