38417

09/10/2025 বিলাল (রা.) যেভাবে দাস জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন

বিলাল (রা.) যেভাবে দাস জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন

ধর্ম ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৪২

মক্কার উমাইয়া ইবনে খালফের ক্রীতদাস ছিলেন হজরত বিলাল ইবনে রাবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু। দাস হওয়ার কারণে তার ওপর যেকোনো ধরনের জুলুম নির্যাতনের বিপক্ষে আওয়াজ তোলার কেউ ছিল না। তাই তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন তা শুনে মনিব উমাইয়া গরম তাওয়ায় সেঁকা রুটির মতো তেতে ওঠল।

উমাইয়া শুরু থেকেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দাওয়াতি কাজের বিরোধিতা করেছিল। অধীনস্থ গোলামের ইসলাম গ্রহণের খবর তার বিরোধিতার আগুনকে আরও তাতিয়ে তুলল। সে এই আগুনের দাহ্য বানাল হজরত বিলালকে।

উমাইয়া মক্কার অন্য মুশরিক নেতাদের সাথে মিলে এই সুযোগটাকে কাজে লাগাল। বিলালের মতো ইসলাম গ্রহণকারী এরকম নিরীহ যারা ছিল, তাদের ওপর শুরু করল অমানুষিক নির্যাতন।

তাওহিদ ও রিসালাতের ওপর ঈমান আনায় বিলালের জীবনে নেমে এলো বিপর্যয়ে খড়গ। উমাইয়ার অনুগত লোকেরা তাকে ধরে নিয়ে গেলো বাতহা উপত্যকায়। সেখানে তার ওপর শুরু হলো নির্বিবাদ নিপীড়ন। মুশরিকদের চেলারা জোরজবরদস্তি করে তার গায়ের কাপড় খুলে নিত। উত্তপ্ত বালির ওপর তাকে চিত করে শুইয়ে বুকের ওপর চাপিয়ে দিত বিশাল ওজনের পাথর। রোদের প্রখরতা আর বালির উত্তাপে পিঠে ফোস্কা পড়ে যেত। পাথরের ভারে নিশ্বাস আটকে থাকত নাকের ডগায়।

কিন্তু শত নির্যাতনেও তারা বিলালকে পর্যুদস্ত করতে পারেনি; পারেনি তার বিশ্বাস থেকে চুল পরিমাণ টলাতে। এত অবর্ণনীয় কষ্টের পরও বিলাল অটল রইলেন তার দীনের ওপর।

মহানুভব আবু বকর

হজরত বিলাল বাতহা উপত্যকায় এভাবে মুশরিক নেতাদের পাশবিকতার শিকার হচ্ছিলেন দিনের পর দিন। একদিন হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই পথ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। বিলালের এই দুর্দশা ও সঙ্গিনতা তাকে ভীষণ উৎকণ্ঠিত করে তুলল। দীনের জন্য বিলালের জান কোরবানি দেখে আবু বকর আপ্লুত হয়ে উঠলেন। তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন, বিলালকে তিনি কুফফারের জিন্দানখানা থেকে মুক্ত করে নিবেন।

এই ভেবে তিনি এগিয়ে গেলেন আহত বিলালের দিকে। তার শরীরে সান্ত্বনার পরশ বুলিয়ে বললেন, হে বিলাল, সুসংবাদ নাও, আমি তোমাকে এই মরণযন্ত্রণার জীবন থেকে মুক্ত করতে এসেছি। হজরত আবু বকরের কথা শুনে বিলাল তার দিকে স্মিতমুখে তাকালেন। এটাকে আসমানি ফায়সালা মেনে মহান আল্লাহর দরবারে সেই পরম পঙক্তি দিয়ে শোকরিয়ার নাজরানা পেশ করলেন, আহাদুন আহাদ—আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, অবিনশ্বর...

হজরত আবু বকর এগিয়ে গেলেন উমাইয়ার দিকে। তাকে বললেন, আমি বিলালকে কিনতে চাই! উমাইয়া তার দিকে বিদ্রুপাত্মক দৃষ্টি দিয়ে বলল, ইবনে কুহাফা, তুমি একে কিনবে, এই নিকৃষ্ট কৃষ্ণাঙ্গ গোলামকে? আবু বকর বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই কিনতে চাই! উমাইয়া দাম হাঁকল, তাহলে তোমাকে নয় ওকিয়া দাম দিতে হবে! আবু বকর সাথে সাথে দাম পরিশোধ করে দিলেন। তা দেখে উমাইয়া বাঁকা হেসে উপহাস করে বলল, ইবনে কুহাফা, তোমার বোকামি দেখে না হেসে পারলাম না। এই গোলামের দাম তুমি যদি এক ওকিয়া বলতে, তাহলেও আমি একে দিয়ে দিতাম। কিছু না বলে বোকামি করে এতগুলো ওকিয়া গচ্ছা দিলে!

উমাইয়ার কথা শুনে হজরত আবু বকর প্রশান্ত হেসে বললেন, ইবনে খালফ, এই গোলামের দাম তুমি যদি একশো ওকিয়া বলতে, তবুও আমি তাকে কিনে নিতাম। তোমার কাছ থেকে তাকে এত কমদামে কিনে আমার দেখি লাভই হয়েছে! এ বলে আবু বকর বিলালকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে এলেন কুফফারের জিন্দানখানা থেকে এবং তাকে আজাদ করে দিলেন আল্লাহর জন্য, ইসলামের জন্য।

হজরত আবু বকরের এই মহানুভবতায় বিলাল আজীবন সিক্ত ছিলেন। অকুণ্ঠচিত্তে তিনি স্মরণ করেছেন সিদ্দিকে আকবারের লিল্লাহি ভালোবাসার কথা।

হজরত আবু বকর বিলালকে নিয়ে এলেন রাসুলের কাছে। সব শুনে রাসুল তাকে মারবাহা জানালেন। বললেন, হে আবু বকর, আমাকেও এই মহৎকাজে শরিক করতে! তিনি রাসুলকে সমর্পিত কণ্ঠে জানালেন, আল্লাহর রাসুল, আমি তো তাদকে আজাদ করে দিয়েছি!

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]