পুলিশ সদর দপ্তরের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীসহ সারা দেশে খুন ও অপহরণের মতো ভয়াবহ অপরাধ বেড়েছে এমন ইঙ্গিত থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ২০২৫ সালে অপরাধের সংখ্যা বেশি দেখা গেলেও এটি মূলত পূর্ববর্তী সরকারের আমলে গোপন থাকা মামলাগুলোর নতুন করে রেকর্ডের ফল।
পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২০ মাসে (২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত) মোট ৬ হাজার ৫৬টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৪৪০টি এবং ২০২৫ সালে ২ হাজার ৬১৬টি মামলা অন্তর্ভুক্ত। একই সময়ে ১ হাজার ৩৫৮টি অপহরণের মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে ৬৪২টি এবং ২০২৫ সালে ৭১৬টি মামলা রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যানের এ তথ্যের ব্যাখ্যা দিয়ে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ ১৩ মাসে খুনের হার তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে সংঘটিত অন্তত ১ হাজার ১৩০টি খুনের মামলা বিপ্লবের পর (২০২৪ সালের ৬ আগস্ট থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত) নতুন করে দায়ের হয়েছে।
প্রেস সচিব অভিযোগ করে বলেন, পূর্বে শাসক দলের সন্ত্রাসীরা এসব হত্যাকাণ্ড গোপন করেছিল এবং পুলিশকেও মামলা নিতে নিরুৎসাহিত করেছিল। ক্ষমতার পরিবর্তনের পর সেসব পুরোনো ঘটনা সামনে এসে রেকর্ডে যুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২৫ সালে অনেক ধরনের অপরাধের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি দেখা গেলেও এটি নতুন কোনো সহিংসতার ঢেউ নয়, বরং এটি বিলম্বিত ন্যায়বিচারের প্রতিফলন। এখন নাগরিকরা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে মামলা করতে পারছেন।
শফিকুল বলেন, শাসক দলের সময় ভুক্তভোগীদের অনেক ক্ষেত্রেই মামলা করতে দেওয়া হতো না। বিশেষত অপরাধীরা যদি ক্ষমতাসীন দলের কর্মী হতো। পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে অনীহা দেখাতো।
প্রেস সচিব জানান, কিছু অপরাধের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। যেমন- ডাকাতি, দ্রুত বিচার আইনের অধীনে অপরাধ, দাঙ্গা ও চুরি।
তিনি বলেন, রিপোর্ট হওয়া সহিংস অপরাধ (যেমন খুন) বেড়েছে বলে মনে হলেও সাধারণ অপরাধ কমছে। এটি একদিকে ভালো আইনশৃঙ্খলার ইঙ্গিত, অন্যদিকে আরও সঠিকভাবে মামলা নিবন্ধনের প্রতিফলন।
প্রেস সচিব আরও বলেন, অপরাধের জবাবদিহি উন্নত হয়েছে। এখন ভুক্তভোগীরা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ভয়ে দমে না গিয়ে মামলা করতে পারছেন এবং পুলিশও তাদের বাধা দিচ্ছে না।