বৈদ্যুতিক সুপারকারের গতি বিপ্লব
বিশ্বজুড়ে অটোমোবাইল খাত এক রূপান্তরমুখী সময়ে দাঁড়িয়ে। পেট্রোল-ডিজেলচালিত গাড়ির যুগ দ্রুত পেছনে পড়ে যাচ্ছে, তার জায়গা দখল করছে নিউ এনার্জি ভেহিকল (এনইভি) বা বৈদ্যুতিক গাড়ি। এরই মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ইভি উৎপাদক বিওয়াইডি আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। তাদের প্রিমিয়াম সাব-ব্র্যান্ড ইয়াংওয়াংয়ের ইউ৯ ট্র্যাক সংস্করণ জার্মানির এটিপি টেস্ট ট্র্যাকে ঘণ্টায় ৪৭২.৪১ কিলোমিটার গতির রেকর্ড গড়ে ইভি দুনিয়ায় এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে।
শুধু গতি নয়, এ অর্জন আসলে প্রযুক্তির সীমা অতিক্রম করার প্রতীক। এতদিন বৈদ্যুতিক গাড়ি মূলত পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী বিকল্প হিসাবেই বিবেচিত হতো। কিন্তু ইয়াংওয়াং ইউ৯ দেখিয়ে দিল, ইভি শুধু টেকসই নয়, বরং সুপারকারেরও প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে। এ গাড়িতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের প্রথম বহুলভাবে উৎপাদিত ১২০০ ভোল্ট আলট্রা-হাই ভোল্টেজ প্ল্যাটফর্ম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উদ্ভাবনী ভেহিকল থার্মাল ম্যানেজমেন্ট সল্যুশন, যা চরম তাপমাত্রা বা এক্সট্রিম ট্র্যাক কন্ডিশনেও গাড়ির পারফরম্যান্স ধরে রাখতে সক্ষম।
ইউ৯-এ রয়েছে ই৪ পাওয়ারট্রেইন, যা বিশ্বের প্রথম কোয়াড-মোটর প্ল্যাটফর্ম হিসাবে স্বীকৃত। প্রতিটি মোটর ৩০ হাজার আরপিএমে ঘুরে ৫৫৫ কিলোওয়াট পিক পাওয়ার আউটপুট তৈরি করতে পারে। এর ফলে পুরো গাড়িটি একসঙ্গে ১২৮৮ হর্স পাওয়ার এবং ১৬৮০ এনএম টর্ক উৎপন্ন করে। বাস্তবে এর মানে হলো, ইউ৯ মাত্র ২.৩৬ সেকেন্ডে ০ থেকে ১০০ কিমি./ঘণ্টা গতিতে পৌঁছে যায়-যা বিশ্বের অনেক নামি সুপারকারকেও হার মানায়।
আরেকটি বড় সাফল্য হলো ইউ৯-এর পাওয়ার-টু-ওয়েট রেশিও। গাড়িটি প্রতি টনে ১২১৭ হর্স পাওয়ার সরবরাহ করে, যা বৈদ্যুতিক গাড়ি খাতে অভূতপূর্ব মানদণ্ড। ফলে এটি শুধু শক্তিশালীই নয়, বরং অবিশ্বাস্যভাবে দ্রুতগতিসম্পন্ন।
এটি ইউ৯-এর প্রথম রেকর্ড নয়। গত বছর আগস্টে গাড়িটি ৩৭৫.১২ কিমি.-ঘণ্টা এবং অক্টোবরে ৩৯১.৯৪ কিমি.-ঘণ্টা গতিতে পৌঁছেছিল। এক বছরের ব্যবধানে এত দ্রুত নতুন মাইলফলক স্থাপন করা প্রমাণ করে, বিওয়াইডি তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন সক্ষমতায় কতটা এগিয়ে।
এই গতি এমনকি চীনের হাইস্পিড রেলের ৩৫০ কিমি.-ঘণ্টাকেও অতিক্রম করেছে। ফলে বলা যায়, আকাশপথের বিমানের পরই এখন দ্রুতগতির ভ্রমণের নতুন প্রতীক হয়ে উঠছে ইলেকট্রিক হাই-পারফরম্যান্স কার।
বিওয়াইডি বাংলাদেশের চিফ মার্কেটিং অফিসার ইমতিয়াজ নওশের বলেন, ‘এটি শুধু গতির বিষয় নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যতের দিকেও এগিয়ে যাওয়া। এই অর্জন প্রযুক্তি ও উচ্চগতির পারফরম্যান্সের সীমানা পেরিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিওয়াইডি’র প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে; এটি বৈশ্বিক অটোমোটিভ খাতে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে।’
তার এ বক্তব্য আসলে পুরো শিল্পের বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। যেখানে আগে ইভি মানেই ছিল ‘সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং শহুরে ব্যবহারের জন্য উপযোগী’। সেখানে এখন এগুলো সুপারস্পোর্টস কারের সমপর্যায়ে অবস্থান করছে।
অটোমোবাইল শিল্প আজ এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু সংকট ও কার্বন নির্গমন হ্রাসের চাপে বৈদ্যুতিক যানবাহন অপরিহার্য হয়ে উঠছে। তবে একই সঙ্গে মানুষ গতি ও পারফরম্যান্সের অভিজ্ঞতাও হারাতে চাইছে না। ইউ৯ প্রমাণ করল ইভি শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, বরং মানবজাতির গতি-তৃষ্ণাকেও পূরণ করতে সক্ষম।