31987

05/15/2025 বাবার হাতে মা খুন, হাসপাতালে কাতরাচ্ছে দুই সন্তান

বাবার হাতে মা খুন, হাসপাতালে কাতরাচ্ছে দুই সন্তান

জেলা সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া

১৪ মে ২০২৫ ১৫:০৭

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ছোট্ট দুইটি শিশু। চার বছর বয়সী কুলসুম ও দেড় বছর বয়সী জান্নাত দুই বোন। তাদের বাবা তাদেরকে হত্যাচেষ্টা করে। এতে গুরুতর আহত হয়েছে শিশু দু’টি। তাদের হাতে স্যালাইন লাগানো। মাথা, মুখ, চোখ, নাকসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম ও রক্তের দাগ। তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছে তারা।

পরকীয়ার জেরে শিশু দু’টির মা মেঘলা খাতুনকে (২২) ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে বাবা মামুন আলী। এ সময় মামুন দুই মেয়েকেও আছাড় মেরে হত্যাচেষ্টা করে। এরপর নিজের মাথা ও গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে মামুন।

মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর এলাকায় নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে মেঘলা খাতুনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় বাবা ও দুই শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শিশুরা এখনও জানে না যে তাদের মা আর বেঁচে নেই।

নিহত মেঘলা খাতুন কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর এলাকার মামুন আলীর স্ত্রী। আহতরা হলেন- কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে মামুন, চার বছর বয়সী কন্যা শিশু কুলসুম ও দেড় বছর বয়সী কন্যা শিশু জান্নাত। রবিউল একজন দিনমজুর। এছাড়া তিনি রংমিস্ত্রির কাজ করেন। আগে তিনি ভাড়ায় রিকশা চালাতেন।

এ বিষয়ে মামুনের মা সুফিয়া বেগম বলেন, পরকীয়ার কারণে মেঘলার সঙ্গে মামুনের পারিবারিক কলহ ছিল। এর আগে সংসার ছেড়ে মেঘলা আরেক জায়গায় চলে গিয়েছিল। দুই দিন আগে মেঘলাকে ফিরিয়ে এনেছে। আজকেও নাকি বউ মোবাইলে কার সঙ্গে কথা বলছিল। ছেলে তা হাতেনাতে ধরে ফেলে। এরপর বউ ও দুই মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে এবং মামুন নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। মেঘলার মৃত্যু হয়েছে, বাকিরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দুই শিশু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, ছটফট করছে।

এ বিষয়ে মামুনের পরিবার, স্বজন ও প্রতিবেশীরা বলেন, মামুনের স্ত্রী মেঘলা পরকীয়ায় লিপ্ত ছিল। কিছুদিন আগে মেঘলা বাড়ি থেকে পরকীয়া প্রেমিকের কাছে চলে যায়। পরকীয়ার জের ধরে মাঝে মধ্যেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। এর জের ধরে আজ রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্ত্রীকে মারধর করে এবং কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে মামুন। পরে দুই কন্যা শিশুকে আছাড় মারে এবং কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এতে তারা তিনজনই গুরুতর আহত হয়। এরপর মামুন ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজেই নিজের মাথায় ও গলায় কুপিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। প্রতিবেশীরা তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্ত্রী মেঘলার মৃত্যু হয়েছে। বাকি তিনজনের অবস্থাও খারাপ।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, তিনজনকেই ধারালো কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। শিশু দুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত মামলা হয়নি।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]