31964

05/14/2025 পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘরবাড়ি ধ্বংস, ক্ষতিপূরণ চান ভারতীয়রা

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘরবাড়ি ধ্বংস, ক্ষতিপূরণ চান ভারতীয়রা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৩ মে ২০২৫ ১৯:০৯

পারমাণবিক অস্ত্রধর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে চারদিনের তীব্র সামরিক সংঘাতের অবসান ঘটেছে। তবে ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরের সীমান্তবর্তী গ্রামের অনেক বাসিন্দা পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে নিজেদের বাড়িঘর ও জীবিকা ধ্বংস হওয়ায় সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি আছে অভিযোগ করে গত ৭ মে ভারতের সামরিক বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। পরে পাকিস্তানও ভারতের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। দুই দেশের এই পাল্টাপাল্টি হামলায় অন্তত ৭০ বেসামরিক নিহত হয়েছেন। সংঘাতের সময় কাশ্মিরের শত শত গ্রামবাসী তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

রয়টার্স বলছে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর কাশ্মিরের সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা এখন নিজেদের বাড়িঘরে ফিরছেন। গ্রামে ফিরে তারা পাকিস্তানের হামলায় বাড়িঘর পুরোপুরি কিংবা ছাদ ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন।

জম্মুর আখনুর জেলার নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরের কোট মাইরা গ্রামের বাসিন্দা রোশন লাল বলেন, ‘‘আমরা বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব? বর্তমানে আমাদের থাকার কোনও জায়গা নেই এবং খাওয়ারও কিছু নেই।’’

৪৭ বছর বয়সী জম্মুর এই বাসিন্দা বলেন, ‘‘গোলাবর্ষণে তার বাড়ি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের কাছে ন্যায়বিচারের দাবি জানাই। আমরা এই ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ চাই।’’

কোট মাইরার পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি ওয়ালা গ্রামের কৃষক করণ সিং বলেন, ‘‘সংঘর্ষের সময় তার সাতটি গরু মারা গেছে। তার পরিবার বর্তমানে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘সংঘর্ষ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি গ্রাম ছেড়ে চলে যাই। আমাদের থাকার কোনও জায়গা নেই।’’

কাশ্মির উপত্যকার সীমান্ত গ্রাম সালামাবাদে গোলার আঘাতে বাদরুদ্দিন নায়ক ও তার ছয় বছরের ছেলে আহত হয়েছেন। সংঘাতের প্রায় পাঁচ দিন পর নিজেদের বাড়িতে ফিরেছেন তারা। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে ফিরে আমার ভালো লাগছে। কিন্তু আমার ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমার দুই চাচার বাড়ি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ধরনের সংঘাতে সীমান্তের বাসিন্দারাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। যে কারণে আমরা স্থায়ী শান্তি চাই।’’

হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত ও মুসলিম-প্রধান পাকিস্তান ব্যাপক বিবাদপূর্ণ কাশ্মিরের একাংশের নিয়ন্ত্রণ করলেও পুরো অঞ্চলই নিজেদের বলে দাবি করে। অতীতে কাশ্মির নিয়ে পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী এই দুই দেশের মাঝে অন্তত দু’বার যুদ্ধও হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট উত্তেজনার জেরে ছোটখাটো বহুবার সংঘর্ষেও জড়িয়েছে দেশ দুটি।

ভারতের স্থানীয় সরকারের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখছেন এবং ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও অন্যান্য স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পর্যালোচনা করছেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আজ আমাদের দলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গেছে। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করবে সরকার।’’

এর আগে, সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, ভারতে নতুন করে হামলা হলে সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে আবারও হামলা চালাবে দিল্লি। যদিও কাশ্মিরে হামলায় জড়িতদের পাকিস্তান সহায়তা করেছে বলে নয়াদিল্লি যে অভিযোগ করেছে; তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ।

গত শনিবার ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পারমাণবিক অস্ত্রধর দুই দেশের সংঘর্ষ থামাতে ওয়াশিংটন ভূমিকা রেখেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এই বিষয়ে পাকিস্তানের হামলায় পাহাড়ি ওয়ালা গ্রামে নিজের ফাটল ধরা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যোগীন্দর লাল বলেন, ‘‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় কান দেওয়া উচিত নয় মোদির। আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ণ প্রতিশোধ চাই।’’

সূত্র: রয়টার্স।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]