ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘নারী সাংবাদিক’ বলে বেড় করে দেওয়া হয়েছে দৈনিক যুগান্তরের মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদক মানিকা চৌধুরীকে। উপস্থিত হুজুররা নারী সাংবাদিকদের পছন্দ করবেন না বলে তাকে বের করে দেওয়া হয়।
শনিবার (৩ মে) দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
মনিকা চৌধুরী বলেন, সকালে বরিশাল প্রেসক্লাবে চরমোনাই হুজুরের সংবাদ সম্মেলনের খবর পেয়ে সেখানে যাই। তখন সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়নি। যথারীতি অন্যান্য সাংবাদিকদের সাথে আমার ক্যামেরা-বুম প্রস্তুত করে ফুটেজ নিচ্ছিলাম তখন হুজুরের অনুসারী কয়েকজন এসে বললেন, ‘আপনি একজন নারী। আপনি এখানে থাকতে পারবেন না। আমাদের এখানে নারী সাংবাদিক গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি বেড়িয়ে যান।’
তিনি বলেন, আমি জানতে চেয়েছিলাম নারী সাংবাদিক কেন গ্রহণযোগ্য নয়? উত্তরে তারা বলেন, ‘এখানে অনেক হুজুরেরা আছেন। তারা ব্যাপারটি পছন্দ করবেন না।’ অন্যান্য সহকর্মীরা তাদের এই কথার প্রতিবাদ করলে তারা বলেন, ‘নারী সাংবাদিক এখানে কিছুতেই থাকতে পারবেন না। তাকে এখান থেকে চলে যেতেই হবে।’ ঘটনার পর আমি লজ্জা পেয়েছি, কান্না করেছি। আমিতো একজন সংবাদকর্মী— নারী হই, পুরুষ হই, ট্রান্সজেন্ডার হই— আমিতো সেখানে সংবাদকর্মী পরিচয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছি।
মনিকা চৌধুরী বলেন, আমার শহরে আমিসহ দু-একজন নারী সাংবাদিক আছেন। আমাকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া শুধুমাত্র পেশাগত অসম্মান না, নারীগত অসম্মান না, আমি মনে করি এটি সাংবাদিক পরিবারের প্রতি অসম্মান। মুফতি ফয়জুল করিম সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়ে আদালতে দায়ের হওয়ার মামলার বিষয়ে। কিন্তু যে আচরণের শিকার হলাম তাতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তিনি যদি আমাদের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হয়ে যান তাহলে সাধারণ নারীরা কতটা সম্মান পাবে সে বিষয়ে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরবর্তীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, আমি আগেই বলেছি বিষয়টি আমি জানি না, ঘটনাটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। দ্বিতীয় কথা আমি একজন মুসলমান আমাকে আমার ধর্ম পালন করার স্বাধীনতা দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র চলবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ইসলাম পালন করতে বাধ্য।
প্রসঙ্গত, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমকে বিজয়ী ঘোষণার দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল মহানগর কমিটি।