সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে অনেক বিষয়ে অস্পষ্টতা খেয়াল করেছি
প্রকাশিত:
১৪ নভেম্বর ২০২৫ ২১:০৬
আপডেট:
১৪ নভেম্বর ২০২৫ ২২:৩৪
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, সরকার গতকাল (বৃহস্পতিবার) জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করেছে, সেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ পর্যালোচনা করে আমরা এই জুলাই সনদের মধ্যকার অনেক বিষয়ে অস্পষ্টতা খেয়াল করেছি।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাতে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, সরকার জুলাই সনদ নিয়ে যে সংকট এবং অস্পষ্টতার জায়গাগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোকে দূর করে অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে এবং খুবই ক্লিয়ার কাট ওয়েতে জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেই বিষয়গুলোকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশের মধ্যে তারা উল্লেখ করবেন। কিন্তু জুলাই সনদ আদেশ জারি করা হলেও এমন কিছু জায়গায় অস্পষ্টতা রয়ে গেছে, যাতে করে জুলাই সনদের আসলে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।
তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যে আদেশে গণভোটের যে প্রসঙ্গ, সেই গণভোটকে কয়েকটি প্রশ্নে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগ করার মধ্য দিয়ে সংস্কারের সমস্ত বিষয়গুলোকে একভাবে না দেখে, আলাদা আলাদাভাবে এখানে দেখা হয়েছে। কিছু কিছু সংস্কারকে কম গুরুত্বপূর্ণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা কমিশনে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা করেছি। সেই দুদক এখনো পর্যন্ত বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নয়। আমরা যে বিষয়টিতে একমত হলাম এবং ঐকমত্য কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। সেই দুর্নীতি দমন কমিশন সেটা কি অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত থাকবে কি থাকবে না? সে ব্যাপারেও কিন্তু এই সনদের বাস্তবায়নের যে আদেশ তাতে ক্লিয়ার করা হয়নি। সে জায়গায় একটা অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। এরপর উচ্চকক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এবার যে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে অর্থাৎ সনদ অবহিত হওয়ার পরের যে উচ্চকক্ষ সেই উচ্চকক্ষে কারা প্রতিনিধি হিসেবে যাবেন, তাদের তালিকা প্রকাশ না করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর অর্থ কি এরকম যে, এবার তালিকা প্রকাশ করা হলো না। কিন্তু পরবর্তী থেকে উচ্চকক্ষের নির্বাচনের আগেই তাদের ক্যান্ডিডেটের তালিকা প্রত্যেকটা দলকে প্রকাশ করতে হবে কি না, সে বাধ্যবাধকতার কথাটি এই জুলাই সনদে অনুক্ত থেকে গেছে।
আখতার হোসেন বলেন, আমরা জুলাই সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন চেয়েছিলাম। এই আদেশের মধ্যে জুলাই সনদের সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বের বিচার, অগুরুত্বের বিচার তৈরি করে এটার আংশিক বাস্তবায়ন এবং আংশিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জুলাই সনদে যেগুলোতে আমরা একমত হয়েছি এবং কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেটা যদি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হয়, সেক্ষেত্রে কী ধরনের ফলাফল তৈরি হবে, সে বিষয়টা কিন্তু এই আদেশের মধ্যে উল্লেখ করা হয়নি। আমাদের দলের তরফ থেকে এর আগেও দাবি জানিয়েছি যে, গণভোটের যে ফলাফল সেটা যেন বাধ্যতামূলক থাকে। সেই গণভোটের ফলাফল থেকে যেন কেউ দূরে সরে না আসতে পারে।
সরকারের কাছে অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশ জারি করা হয়েছে, এই আদেশের ব্যাখ্যা ক্ষমতাবানরা তাদের মতো করে করতে পারেন তেমন একটা অবস্থায়, তেমন একটা ভাষ্যে। সরকার অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করবে এবং একইসঙ্গে যে বিষয়গুলোতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা রয়েছে, সে অস্পষ্টতাগুলো দূর করবে। জুলাই সনদ নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সংকট নিরসনে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: