40626

11/16/2025 COP30: জলবায়ু অর্থায়নে বড় সংকট, ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

COP30: জলবায়ু অর্থায়নে বড় সংকট, ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৩

ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত COP30 জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক অর্থায়ন সংকট নতুন করে বড় আলোচনায় উঠে এসেছে। উন্নয়নশীল ও জলবায়ু-ঝুঁকিপ্রবণ দেশগুলো বলছে, জলবায়ু মোকাবিলায় অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে তাদের অভিযোজন সক্ষমতা ভেঙে পড়বে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে — যেখানে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদীভাঙন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার প্রভাব এখনই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।

সম্মেলনে জানানো হয়, বৈশ্বিক জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রম চালাতে বছরে যে পরিমাণ তহবিল প্রয়োজন, তার একটি ক্ষুদ্র অংশই বাস্তবে সংগৃহীত হচ্ছে। ধনী দেশগুলোর দেওয়া প্রতিশ্রুত অর্থের বড় অংশই অনুদানের বদলে ঋণ হিসেবে আসছে, যা অর্থনৈতিক চাপে থাকা দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি করছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো সাফ জানিয়ে দিয়েছে—ঋণ নয়, গ্রান্ট-ভিত্তিক অর্থায়নই প্রকৃত সমাধান

বাংলাদেশসহ জলবায়ু-ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলগুলো দাবি তুলেছে—ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ তহবিলকে আরও কার্যকর করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা, কৃষিতে উৎপাদন কমে যাওয়া, ঘূর্ণিঝড়ের ঘনঘন আঘাত, জলবায়ু-জনিত স্বাস্থ্য সংকট—এই সব ক্ষতির জন্য ন্যায্য আর্থিক সহায়তা ছাড়া টেকসই অভিযোজন সম্ভব নয়। এখানকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন অত্যন্ত জরুরি।

COP30-এ জনস্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষ সতর্কতা উচ্চারিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার কারণে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্য খাতে জলবায়ু অভিযোজনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশেও ডেঙ্গু, জলবাহিত রোগ, তাপপ্রবাহ ও অপুষ্টির মতো সমস্যার ব্যাপকতা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করা হয়।

সম্মেলনে আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভূমিকা নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে। তাদের দাবি—প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা, বনায়ন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় জ্ঞানকে জলবায়ু সিদ্ধান্তে গুরুত্ব দিতে হবে। জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে তাদের স্বীকৃতি ও অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, জলবায়ু মোকাবিলায় শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তব অর্থায়ন দরকার। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূলীয় জনপদে অভিবাসন, কৃষিজমি হারানো এবং নদীভাঙনের কারণে প্রতিবছর লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে—যা দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামোকে চাপের মুখে ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক সহায়তা না এলে দেশের টেকসই উন্নয়ন কঠিন হয়ে পড়বে।

আলোচনার সারমর্ম হলো—জলবায়ু অর্থায়নের ঘাটতি সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। বিশ্ব যদি এখনই যৌথভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে বাংলাদেশসহ দুর্বল দেশগুলো আগামী দশকে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বড় জলবায়ু বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]