প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক পদক্ষেপের প্রশংসা
 প্রকাশিত: 
 ১৫ জুলাই ২০২৫ ০৭:৪৩
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ২১:৩৮
 
                                অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন বিশ্বব্যাংকের নবনিযুক্ত দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট। বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
সোমবার (১৪ জুলাই) রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ প্রশংসা করেন।
মঙ্গলবার (১৫ জু্লাই) সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। এসময় বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের নতুন বিভাগীয় পরিচালক জ্যাঁ পেসমে উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনার সময়, জুট বাংলাদেশের প্রতি তার গভীর অনুভূতি প্রকাশ করেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপালের জন্য কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে তার পূর্ববর্তী মেয়াদের কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, “আপনি এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদ দারুণ কাজ করছেন। বিশেষ করে আর্থিক খাতের বেশ কিছু জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনারা সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা এই যাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত এবং বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে আমরা একাত্ম।”
তিনি গত বছরের জুলাইয়ের বিদ্রোহে প্রাণ হারানো শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এটিকে ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত সবার জন্য একটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তার এই সহানুভূতি ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “যখন আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন দেশটি যেন একটি ভূমিকম্প-পরবর্তী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই আমরা শুরু করি, কিন্তু উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থন আমাদের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।”
তিনি বলেন, “গত জুলাইয়ে আমাদের তরুণরা একটি স্বপ্ন দেখিয়েছে— নতুন বাংলাদেশ গড়ার। বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে। আজ আমরা ‘জুলাই নারী দিবস’ পালন করছি। তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। তরুণরা আমাদের দেশের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের তরুণদের ওপর মনোনিবেশ করা এবং তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলিত হওয়া দরকার।”
বাংলাদেশকে শুধুমাত্র ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে না দেখে বৃহত্তর অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হয়, তাহলে সমগ্র দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল সমৃদ্ধ হবে। যদি আমরা নিজেদের আলাদা করি, তাহলে আমরা অগ্রগতি করছি না। আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুবিধা এবং পরিবহন বিকাশ করতে হবে। আমাদের একটি সমুদ্র আছে। যা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই তরুণ জনগোষ্ঠীর ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা আপনার শিল্পকারখানা বাংলাদেশে নিয়ে আসুন। আমরা উৎপাদন হাব গড়তে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেব।”
নারীর ক্ষমতায়নে অধ্যাপক ইউনূসের ভূমিকার প্রশংসা করে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, “বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য শিক্ষা ভাতা কর্মসূচির যে অগ্রণী উদ্যোগ আমরা একসময় দিয়েছিলাম, তা এখন অনেক দেশ অনুকরণ করছে। আমরা আপনাদের পাশে আছি। যুবসমাজের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে বিশ্বব্যাংক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।”
জোহানেস জুট জানান, গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে এবং আগামী তিন বছরে সমান হারে সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরস্থ নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) নতুন ব্যবস্থাপনার অধীনে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধির তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা এটিকে আরও কার্যকর করে তোলা। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে নিট সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এর মূল কারণ ছিল ইন্ট্রা-কোম্পানি ঋণ এবং শক্তিশালী ইকুইটি বিনিয়োগ।”
এসএন /সীমা

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: