প্রিসাইডিং-রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে আসছে নতুন মুখ
 প্রকাশিত: 
 ১৪ জুলাই ২০২৫ ০৬:৪৩
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ২১:৪১
 
                                নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম বন্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে প্রিসাইডিং ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়োগে পরিবর্তন, প্রবাসী ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালট চালু, সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিয়ম ঠেকাতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সিইসি জানান, আসন্ন নির্বাচনে ভোটের অনিয়ম ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়োগে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের চিন্তা করা হচ্ছে। অতীতে শিক্ষকরা এই দায়িত্ব পালন করলেও এবার সেই দায়িত্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উপর দেওয়ার কথা ভাবছে কমিশন।
সিইসি বলেন, আমাদের চিন্তা আছে ব্যাংকের অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়া। কারণ এরা তো সরকারে ছিল না। এরা তো রিগিংয়ের সহযোগী ছিল না। আমরা ব্যাংকগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় রাখছি।
তিনি আরও বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে, যারা রিগিংয়ে সহায়তা করেছে সেই সমস্ত প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, আমরা তাদেরকে যথাসম্ভব পরিহার করবো। আমাদের জেলা নির্বাচন অফিসাররা তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সাধারণত জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের এই দায়িত্ব দেওয়া হলেও, এবার কোথাও কোথাও ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে শুধুমাত্র কমিশনের কর্মকর্তা হলেই হবে না, তাদের যোগ্যতা যাচাই করে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সিইসি বলেন, মোটামুটিভাবে তাদের যোগ্যতা দেখে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অফিসারদের নিয়োগ করবো। তবে শর্ত হলো—তাদেরকে উপযুক্ত কর্মকর্তা হতে হবে। বাকিটা আমাদের জেলা প্রশাসকের ওপর নির্ভর করতে হবে।
প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবার নির্বাচন কমিশন ‘অনলাইন বেসড পোস্টাল ব্যালট’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিইসি জানান, শুরুতে প্রক্সি ভোটিং, অনলাইন, পোস্টাল এবং সশরীরে ভোটের বিভিন্ন পদ্ধতি বিবেচনা করা হয়েছিল। তবে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলের পরামর্শে পোস্টাল ব্যালটকেই চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।
সিইসি বলেন, প্রবাসীদের ভোট নিয়ে আমরা নানা ধরনের অপশন নিয়ে আলোচনা করেছি বিশেষজ্ঞদের ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে। শেষ পর্যন্ত দেখলাম ম্যাক্সিমাম লোকই পোস্টাল ব্যালটটাকে সাপোর্ট করে। এজন্য আমরা কমিশন থেকে ডিসিশন নিয়েছি যে ভোট হবে অনলাইন বেসড পোস্টাল ব্যালট।
এই পদ্ধতিতে ভোট দিতে হলে প্রবাসী ভোটারদের অনলাইনে আগে থেকেই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরপর নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের কাছে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। সিইসি বলেন, আমরা এখন অনলাইনে একটা প্লাটফরম বানাবো, মানুষের অপশন নেওয়ার জন্য, তাদেরকে প্রবাসী ভোটার হিসেবে ট্রিট করবো। পরে তাদের কাছে ব্যালট পেপার পাঠাবো। এটা অনেকটা কস্টলি (ব্যয়বহুল) হবে। আমরা এজন্য ডিএইচএল ও ফেডেক্সের সাথে কথা বলেছি। একেকটা ভোটের জন্য পাঁচ হাজার টাকা লাগবে।
তবে সরকারি ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠানো হলে প্রতি ব্যালটের খরচ ৭০০ টাকা পড়বে। নির্বাচন কমিশন এই পথটিকেই গ্রহণ করার কথা ভাবছে। সিইসি বলেন, আমরা অভিয়াসলি সরকারি পোস্ট অফিসকে ইউজ করবো। তাদের সাথে কথা হয়েছে, তারা স্পেশাল অ্যারেজমেন্ট করবে। কুইকলি যাতে হয়।
তিনি বলেন, ব্যালট ছাপা থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় থাকে মাত্র ১২ দিন। এই সময়ের মধ্যেই ব্যালট পাঠানো এবং ফেরত আনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, এটা সম্ভব, কিন্তু এক্ষেত্রে প্রায় ২৪ শতাংশের মতো সিস্টেম লস আছে। আমাদের মতো দেশে এটা আরও অনেক বেশি সিস্টেম লস হতে পারে। অনেক ব্যালট পেপার একজনের কাছে পাঠালাম, দেখা গেলো ভোট দিল না। এতে অনেক ব্যালট নষ্ট হতে পারে। তখন এগুলো বাতিল ভোট হয়ে যাবে। সুতরাং এই ঝুঁকিগুলো আছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যে, মোটামুটিভাবে একটা সাইজাবেল নম্বর, প্রবাসীদেরকে আমরা নিয়ে আসবো।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার দৃঢ়ভাবে বলেন, দিস আওয়ার কমিটমেন্ট, উই আর সিরিয়াসলি ওয়ার্কিং অন ইট। গোঁড়া থেকেই আমরা এটার ওপর এক্সারসাইজ করছি। সুতরাং ইনশাল্লাহ আমরা এটা ইমপ্লিমেন্ট করবোই করবো।
নির্বাচন কমিশনের আরেকটি বড় কাজ হচ্ছে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ। এবারে ৩০০টি আসনের মধ্যে ৭১টি আসন নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আবেদন এসেছে। অনেকে ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ বিষয়ে সিইসি বলেন, আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে অনেক আবেদন আছে। এটা চাপ না।
সীমানা নির্ধারণ নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বা চাপ থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এই কাজের জন্য একজন নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস-এর ১৪ জন বিশেষজ্ঞ এই কাজ করছেন। সিইসি জানান, সব কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছি। শিগগিরই খসড়া প্রকাশ করতে পারবো।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনে করেন, এ বছর একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নিয়োগ পদ্ধতি থেকে শুরু করে প্রবাসী ভোটের নতুন ব্যবস্থা এবং সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো আনা হচ্ছে, তা নির্বাচন ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সূত্র: বিবিসি
ডিএম /সীমা

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: