বৃহঃস্পতিবার, ৩০শে অক্টোবর ২০২৫, ১৫ই কার্তিক ১৪৩২


ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীর জবানবন্দি

‘হাসিনা পালিয়ে গেছে, গুলি করছেন কেন’ বললেও এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে পুলিশ


প্রকাশিত:
৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:৫৮

আপডেট:
৩০ অক্টোবর ২০২৫ ২১:৪৬

ছবি : সংগৃহীত

বিজয়ের স্লোগানে মুখর ছিল বাইপাইল এলাকা। শেখ হাসিনার পালানোর খবরে উল্লাসে মেতে ওঠেন তরুণরা। কিন্তু মুহূর্তেই রক্তাক্ত বিভীষিকায় রূপ নেয় উচ্ছ্বাস। সানি মৃধার দুই পা ভেদ করে বেরিয়ে যায় পুলিশের চাইনিজ রাইফেলের গুলি। শরীরজুড়ে ছররার ক্ষত। এখনও রয়ে গেছে পিলেট। পায়ে পরতে হয় সাপোর্টিং ডিভাইস।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের দিন আশুলিয়ার বাইপাল এলাকায় এভাবেই নৃশংসতা চালায় পুলিশ বাহিনী। সেদিনের বীভৎস বর্ণনা আজ (বৃহস্পতিবার) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে দেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ২৯ বছর বয়সী সনি মৃধা।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ১৬তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ছিল আজ। ২১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে এসে ট্রাইব্যুনালে প্রকাশ্যে নিজের ক্ষতস্থান দেখান সানি। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।

জবানবন্দিতে সানি মৃধা বলেন, আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একমত হয়ে আন্দোলনে যোগ দেই। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুরে বাইপাইল এলাকায় অবস্থান নেই। ২টা থেকে আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন বলে জানতে পারি। তখন সবাই বিজয় মিছিল করি। ঠিক ওই মুহূর্তে আশুলিয়া থানার দিক থেকে অনেক গোলাগুলির শব্দ আসছিল। ওই সময় আমরা ছাত্র-জনতা সবাই মিলে আশুলিয়া থানার দিকে রওনা হই। একপর্যায়ে থানার কাছে গলির মধ্যে চলে যায় পুলিশ। আমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকি, ‘হাসিনা পালিয়ে গেছে, আপনারা কেন এখনও গুলি করছেন’। কিন্তু আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা।

 

তিনি বলেন, পুলিশের ছোড়া চাইনিজ রাইফেলের একটি গুলি আমার হাঁটুর ওপর কোমরের নিচে ডান পায়ে লেগে দুই পা ভেদ করে বাঁ পা দিয়ে বেরিয়ে যায়। হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানেও শর্টগানের ছররা গুলি লাগে। ছররা গুলির ১৭টি পিলেট বের করা হলেও ডান হাতের কনুইতে এখনও একটি রয়ে গেছে। ওই দিন আমার সঙ্গে আরও অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে আমার পরিচিত একজন ছিলেন। তার নাম সজল।

 

এই সাক্ষী বলেন, গুলি লাগার পর আন্দোলনরত এক ভাইকে আমাকে বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করি। তখন ওই ভাইসহ অন্য আন্দোলনকারীরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রথমে হাবিব ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ভর্তি না নেওয়ায় গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নেন তারা। সেখানে এক্স-রে করার পর আমাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখানে এক মাস সতেরো দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। এরপর আমি সিআরপি-এ চিকিৎসাধীন ছিলাম তিন মাস। সিআরপি থেকে ঢাকা সিএমএইচ-এ তিন-চারদিন চিকিৎসা নেই। সর্বশেষে পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না। আমাকে এখনও ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। সাপোর্টিং ডিভাইস (এএফও) ব্যবহার করতে হয় ডান পায়ে। দুই পায়ের নার্ভে অসহ্য ব্যথা রয়েছে।

মরদেহ পোড়ানো নিয়ে সানি বলেন, আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন একটি ফেসবুক পোস্টে ভিডিওর মাধ্যমে সহযোদ্ধা সজলকে আশুলিয়া থানার সামনে একটি ভ্যানে তুলতে দেখিপুলিশ ভ্যানে তোলার পর অন্যদের সঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া হয়

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হুকুমে স্থানীয় এমপি সাইফুলসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান। রনি ভূঁইয়া নামে একজনের হাতে আমি নিজে অস্ত্র দেখেছিলাম। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি চাই। যেন আগামীতে কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনগণের ওপর অত্যাচার করতে না পারেন।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সানিকে জেরা করেন পলাতক আট আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীসহ অন্যান্যরা। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান। এ মামলায় এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ২১ জন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী বুধবার (৫ নভেম্বর) দিন ঠিক করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২।

 

এ মামলায় গ্রেপ্তার আট আসামিকে আজ সকালেও কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আনে পুলিশ। তারা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top