হিজাববিরোধী আরও এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল ইরান
 প্রকাশিত: 
 ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০০:৪৯
 আপডেট:
 ১ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:৩০
 
                                ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় হামলা চালিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সোমবার প্রকাশ্যে ওই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে ইরানের বিচারবিভাগ সংশ্লিষ্ট সংবাদ সংস্থা মিজান জানিয়েছে। এ নিয়ে ইরানে হিজাববিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর গত এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো।
হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায় ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী তরুণী জিনা মাহসা আমিনি মারা যান। পুলিশি নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে দাবি করে দেশটিতে হিজাব-বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন হাজার হাজার মানুষ। এই বিক্ষোভ এখন সরকার-বিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরের মাঝের দিকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভের সাথে জড়িত থাকার দায়ে ইরানের বিচারবিভাগ এখন পর্যন্ত ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে।
নারীদের নেতৃত্বে পরিচালিত বিক্ষোভ ইরানের ৩১টি প্রদেশের ১৬০ শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের এবারই প্রথম ইরানের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
মিজান বলেছে, সোমবার সকালে পবিত্র শিয়া নগরী মাশাহদে মজিদ রেজা রাহনাভারদের ফাঁসি জনসম্মুখে কার্যকর করা হয়েছে... নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছিল।
দেশটির আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ফারসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মজিদ রেজা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী বাসিজের দুই সদস্যকে হত্যা এবং চারজনকে আহত করেছিলেন। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী বাসিজ বাহিনী দেশটিতে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনের অভিযানে সম্মুখসারিতে রয়েছে।
দেশটির মানবাধিকার কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২৩ বছর বয়সী মজিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন করতে গিয়ে শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রকরা ‘অপরাধমূলক কাজ’ করছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ইরানের আন্দোলনকারীদের অ্যাকাউন্ট ‘১৫০০তাসভির’ বলেছে, ‘আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা মজিদ রেজার পরিবারকে সকাল ৭টায় (স্থানীয় সময়) ফোন করে বেহেশত-ই রেজা কবরস্থানে যেতে বলেন। তারা জানান, আমরা আপনার সন্তানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর দাফন করেছি।’
তবে ইরানের আন্দোলনকারীদের এই টুইটার অ্যাকাউন্টের তথ্য স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে সহিংসতা চালানোর দায়ে প্রথম একজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ইরান। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর একটি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মোহসেন শেকারির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
তাকে দাঙ্গাবাজ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলা হয়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর তেহরানের প্রধান একটি সড়ক বন্ধ করে দিয়ে ইরানের আধা-সামরিক বাহিনী বাসিজের একজন সদস্যের ওপর ছুরি হামলা চালিয়েছিলেন মোহসেন। এতে বাসিজের ওই সদস্য গুরুতর আহত হন।
দেশটির একজন আন্দোলনকারী বলেছেন, কোনও যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই লোক দেখানো বিচারের মাধ্যমে মোহসেনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
নরওয়ে-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটসের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোঘাদ্দাম এক টুইটে বলেছেন, ইরানি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে দ্রুত বাস্তব প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি না হলে প্রত্যেক দিনই বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর শুরু করবে তেহরান।
এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ২০০ জন নিহত হয়েছেন বলে দেশটির সরকার স্বীকার করেছে। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, হিজাববিরোধী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় রোববার পর্যন্ত চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সির (এইচআরএএনএ) তথ্য অনুযায়ী, ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৮৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন এবং ১৮ হাজার ২৫৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভ-সহিংসতায় দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর ৬১ সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
চলমান বিক্ষোভ সামলাতে গত ৪ ডিসেম্বর ইরানের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মনতাজেরি বিতর্কিত নৈতিকতা পুলিশকে বিলুপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও দেশটির বিক্ষোভকারীরা নৈতিকতা পুলিশের বিলুপ্তির ঘোষণা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এখনও কিছু কিছু শহরে পুলিশের বিশেষ এই শাখার সদস্যদের টহল দিতে দেখা যাচ্ছে।

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: