ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধে কে জয়ী?
 প্রকাশিত: 
 ২৪ জুন ২০২৫ ১০:৫৯
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:১৭
 
                                ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও নাটকীয়তার পর অবশেষে শেষ হয়েছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার ১২ দিনের সংঘাত। অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন।
ইরান ও ইসরায়েল—দুই দেশের গণমাধ্যমই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যুদ্ধবিরতি নিয়ে তেলআবিবের দাবি, 'ইরানে ব্যাপক সাফল্যের' পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। এমনটাই জানানো হয়েছে ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে।
এছাড়া যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন করা হলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার (২৪ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরানে প্রায় দুই সপ্তাহের ধারাবাহিক হামলায় লক্ষ্য পূরণের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে তারা।
যদিও যুদ্ধে দুই পক্ষই নিজেদের বিজয়ী দাবি করছে। কিন্তু, আদতে এ যুদ্ধে ইরানের শক্তিমত্তার একটি সফল প্রদশনি দেখেছে বিশ্ববাসী। ইসরায়েলের দর্পচূর্ণ করেছে ইরান।তাদের আয়রন ডোমসহ তিনস্তরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙুলী দেখিয়ে তেলআবিব ও হাইফাসহ বেশ কয়েকটি শহরের বেশিরভাগ ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়।
তবে, ইসরায়েলি হামলায় বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হারিয়েছে ইরান। অন্যদিকে, ইসরায়েলের কৌশলগত স্থাপনা ও সেনাঘাঁটিতে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের গর্বের ধন বিজ্ঞান গবেষণাগার ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দপ্তর গুড়িয়ে দিয়েছে।
আমেরিকার সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের ফলে ইহুদিবাদী দেশটির প্রতিদিন প্রায় কয়েকশ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।
এই ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপ এড়াতে ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞ এবং রাজনীতিবিদরা দ্রুত এই সংঘাতের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাসিক খরচ কমপক্ষে ১২ বিলিয়ন ডলার। ইরানের গণমাধ্যম দ্যা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে- যুদ্ধ যদি দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হতো, তাহলে আর্থিক এবং কাঠামোগত চাপ নিয়ন্ত্রণ করা দেশটির পক্ষে সম্ভব হতো না।
ইরান ও ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির সুনির্দিষ্ট সময় ও শর্ত নিয়ে এখনো বিভ্রান্তি রয়েছে। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর হয়েছে।’ তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে এ কথা বলেন। ট্রাম্প আরও লেখেন, ‘অনুগ্রহ করে এটি ভঙ্গ করবেন না!’
এই সংঘাতে ইরানে কয়েক শ মানুষ এবং ইসরায়েলে দুই ডজনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে দেশ দুটির সরকার স্বীকার করেছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ছাড়া, উভয় দেশেই বিপুলসংখ্যক স্থাপনা পরস্পরের হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশনের অংশ প্রেস টিভি বলেছে, ‘ইসরায়েল অধিকৃত এলাকায় মঙ্গলবার সকালে ইরানের চার দফা হামলার পর যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে।’
সামরিক ঘরানার আধা-সরকারি সংবাদমাধ্যম তাসনিম টেলিগ্রামে সংক্ষিপ্ত এক লাইনের খবরে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি ‘কার্যকর হওয়ার পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ ও ওয়াইনেট নিউজ পোর্টালেও শিরোনাম এসেছে যে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছিল, ‘শত্রুর ওপর যুদ্ধবিরতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে’, তবে তারা কোনো নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেনি। এখন পর্যন্ত ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
তার আগে, গতকাল স্থানীয় সময় সোমবার রাতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি এই ঘোষণা দেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘সবাইকে অভিনন্দন! ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সম্পূর্ণ এবং পূর্ণ যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে চুক্তি হয়েছে (এই পোস্ট লেখার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর, যখন ইসরায়েল ও ইরান তাদের চলমান, চূড়ান্ত মিশনগুলো শেষ করবে!),১২ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, যার পর যুদ্ধকে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ ঘোষণা করা হবে!’
যুদ্ধবিরতি কখন শুরু হবে জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘সরকারিভাবে, আগে ইরান যুদ্ধবিরতি শুরু করবে এবং এর ১২ ঘণ্টা পর ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি শুরু করবে।
২৪ ঘণ্টা শেষে, আনুষ্ঠানিকভাবে “১২ দিনের যুদ্ধ” শেষ হওয়ার ঘোষণা বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হবে। প্রতিটি পক্ষের যুদ্ধবিরতির সময়, অপর পক্ষ শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ করবে।’
বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে মধ্যস্থতা করেছে কাতার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনৈতিক সূত্র ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টকে এই তথ্য জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই চুক্তি হওয়ার আগে ট্রাম্প কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে কথা বলেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানির সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে, কিছুক্ষণ আগেও ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে তাঁর দাবিকৃত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রশংসা করেছেন। অথচ, এখনো দুই দেশ একে অপরের ভূখণ্ডে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ট্রাম্প বলেন, আজকের এই চুক্তি আমরা করতে পারতাম না, যদি আমাদের দুর্দান্ত বি-২ বিমানের পাইলটদের মেধা ও সাহস না থাকত এবং এই অভিযানের সঙ্গে জড়িত সবার অবদান না থাকত।
ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া আরেক পোস্টে ট্রাম্প লিখেন, ইসরায়েল ও ইরান প্রায় একই সময় আমার কাছে এসে বলল, ‘শান্তি!’ আমি বুঝতে পারলাম, সময়টা এখনই। পুরো বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যই হচ্ছে এই শান্তির আসল বিজয়ী! দুই দেশই ভবিষ্যতে প্রচুর ভালোবাসা, শান্তি ও সমৃদ্ধি দেখবে।’

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: