আমেরিকার কাছ থেকে ৪০০ জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে তাইওয়ান
 প্রকাশিত: 
 ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৩৩
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৪৫
                                তাইওয়ানের হুয়ালিয়েনের বিমানঘাঁটিতে যুদ্ধ প্রস্তুতি মিশনে মার্কিন-নির্মিত হারপুন এজিএম-৮৪ এন্টি-শিপ মিসাইল লোড করছে বিমান বাহিনীর সৈন্যরা।
তাইওয়ান ইস্যুতে চীন ও পশ্চিমাদের মধ্যে বরাবরই বিরাজ করছে উত্তাপ। চীন এই ভূখণ্ডটিকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে কার্যত আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করছে। আর তাই চীনা হুমকির মুখে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৪০০টি জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে যাচ্ছে তাইওয়ান।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে তাইওয়ান ৪০০টি মার্কিন স্থল-চালিত হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র কিনবে বলে সোমবার জানিয়েছে ব্লুমবার্গ নিউজ। মূলত বাণিজ্য গোষ্ঠীর একজন নেতা এবং তাইওয়ানের ক্ষেপণাস্ত্র কেনার বিষয়টি জানেন এমন ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে মার্কিন এই সংবাদমাধ্যমটি এই তথ্য সামনে এনেছে।
ইউএস-তাইওয়ান বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট রুপার্ট হ্যামন্ড-চেম্বার্সের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের পক্ষে ইউএস নেভাল এয়ার সিস্টেম কমান্ডের জারি করা বোয়িং-এর সাথে একটি চুক্তির ফলে (তাইওয়ান) প্রথমবারের মতো এই মিসাইলের ভ্রাম্যমাণ স্থল-চালিত সংস্করণটি পাবে।
এর আগে তাইওয়ান এই মিসাইলের জাহাজ থেকে নিক্ষেপযোগ্য সংস্করণ কিনেছিল।
রয়টার্স বলছে, গত ৭ এপ্রিল ক্রেতার নাম না জানিয়ে ৪০০টি জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ১.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তির কথা ঘোষণা করে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। দপ্তরটি বলেছে, এই মিসাইলের উৎপাদন ২০২৯ সালের মার্চের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ বলেছে, তাইওয়ান হচ্ছে এই মিসাইলের ক্রেতা। পেন্টাগন অবশ্য এই চুক্তির বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। সেসময় তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে বৈঠক করেন। আর সেই বৈঠকে চীনের ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে তাইওয়ানে অস্ত্র সরবরাহ ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন প্রেসিডেন্ট সাই।
বৈঠকের পর হাউস সিলেক্ট কমিটি অন দ্য চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি’র রিপাবলিকান চেয়ারম্যান মাইক গ্যালাঘের বলেছেন, সৌদি আরবে তার নির্ধারিত সফরের আগে তাইওয়ানকে হারপুন অ্যান্টি-শিপ মিসাইল দেওয়ার উপায় খুঁজতে চান তিনি।
এর আগে ২০২০ সালে তাইওয়ান বলেছিল, সামরিক আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে তারা বোয়িং-নির্মিত স্থল-ভিত্তিক হারপুন অ্যান্টি-শিপ মিসাইল কেনার পরিকল্পনা করেছে।
এদিকে ক্ষেপণাস্ত্র কেনার সংবাদ প্রতিবেদন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তাইওয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র সান লি-ফ্যাং বলেন, মন্ত্রণালয় এর আগেই ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়ের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেছিল। তিনি আরও জানান, চুক্তিটি নির্ধারিত শিডিউল অনুসারে চলবে বলে ‘আত্মবিশ্বাসী’ তিনি।
উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। তাইওয়ানের ভাষ্য, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে। তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: