পাচারের জন্য রাখা হয়েছিল ৭৩টি কচ্ছপ, হঠাৎ হাজির বনকর্মকর্তারা
 প্রকাশিত: 
 ২১ মে ২০২৫ ১৪:৩৪
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২১
 
                                নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পাচারের জন্য সংরক্ষিত ৭৩টি কচ্ছপ উদ্ধার করেছে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত এই অভিযানে এক পাচারকারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত কচ্ছপগুলোর ওজন প্রায় ৮০ কেজি বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
বুধবার (২১ মে) সকালে বেগমগঞ্জ উপজেলার জমিদারহাট এলাকায় অভিযান চালানো হয়। বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক ও আব্দুল্লাহ আস সাদিকের নেতৃত্বে বন বিভাগের একটি দল এই অভিযান পরিচালনা করে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক ও আব্দুল্লাহ আস সাদিকের নেতৃত্বে একটি টিম এই অভিযান চালায়। অভিযানে তিনটি প্রজাতির মোট ৭৩টি কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ২৫টি কড়ি কাইট্যা, ৪২টি সুন্ধি কাছিম এবং ৬টি হলুদ কাইট্যা। উদ্ধারকৃত কচ্ছপগুলোর মোট ওজন প্রায় ৮০ কেজি। অভিযানকালে একজন পাচারকারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাচারকারী জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি নোয়াখালীর বিভিন্ন জলাশয় থেকে কচ্ছপ সংগ্রহ করে মজুদ করতেন এবং পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারে সহায়তা করতেন। উদ্ধারকৃত কচ্ছপগুলোও পাচারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।
বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক ও আব্দুল্লাহ আস সাদিক অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তারা বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে পাচারের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করে রাখা ৭৩টি কচ্ছপসহ এক পাচারকারীকে আটক করা হয়।
উদ্ধারকৃত কচ্ছপগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে দ্রুত প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে। আটক পাচারকারীর বয়স ৭৫ বছরের ওপর। বিশেষ বিবেচনায় তাকে সতর্ক করে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে তারা সবসময় সক্রিয় এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা বলেন, দুই-তিন দশক আগেও দেশের নদী-নালা, খাল-বিল, হাওরসহ জলাশয়ে বিভিন্ন প্রজাতির কাছিম প্রচুর দেখা যেত। তবে বাসস্থান ধ্বংস ও অতিরিক্ত শিকারের কারণে এখন এ প্রাণীগুলো বিলুপ্তির পথে। দেশে যতগুলো কচ্ছপের প্রজাতি রয়েছে, প্রায় সবগুলোই এখন হুমকির মুখে রয়েছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী কচ্ছপ একটি সংরক্ষিত প্রাণী। তাই এদের শিকার, হত্যা বা কোনো ক্ষতিসাধন করা আইনের ধারা ৬ এবং ৩৪(খ) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ বলেন, বন্যপ্রাণী পাচার বন্ধে কেবল প্রশাসনিক তৎপরতা নয়, প্রয়োজন জনসচেতনতা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি সম্মান। নোয়াখালীতে কচ্ছপ পাচারের এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল যে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা ও অংশগ্রহণ জরুরি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের লক্ষ্যে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চালানো হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও আরও জোরদার অভিযান পরিচালিত হবে।

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: